বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এক ভয়ঙ্কর সময়ে গল্প মানুষ এবং…

আপডেট : ০৬ জুন ২০২৩, ১৩:৫০

অনেকেই মনে করেছিল '৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে। একটি স্বাধীন দেশে সব ধর্মের মানুষের জন্য অধিকারের স্বাধীনতা স্থায়ী রূপ পাবে। কিন্তু তা হয়নি। আসলে স্বপ্ন সবময়ই কাল্পনিক বিষয়। হবেই বা না কেন? পুঁজিবাদী সমাজে গণতন্ত্র মানে ভোটের রাজনীতি। যদি ভোট না দেয় তাহলে আতংক ছড়াও সংখ্যালঘুদের মনে। দক্ষিণ এশিয়াতে এটাই এখন নিয়ম। '৭১-এ পাকিস্তান যা করেছিল, তাদের দোসররা এখনো সেই দুঃস্বপ্ন দেখে।

এই দুঃস্বপ্ন না ভাঙা পর্যন্ত যুদ্ধ থামবে না! অথচ মানুষ হিসেবে বাঁচতে হলে এটা ভাঙতেই হবে। মাহমুদ শরীফের মানুষ এবং…উপন্যাসটি পড়ে শুরুতে এটুকুই মনে হয়। তিনি তার বইয়ে উত্তর প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছেন এক ভয়ংকর সময়ে গল্প আবার সেই সময়টিকে শুদ্ধ করার দায়িত্ব দিয়েছেন উত্তর প্রজন্মের কাছে।  

একটি নিচ্ছিদ্র আবেদন আছে বইটির। হয়তো ভয়ংকর। শিউরে উঠবে মানুষ তবু বইটি পড়া উচিত সবার। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের। কারণ তারাই যুদ্ধ থামাবে এই বিশ্বাস নিয়ে।

মাহমুদ শরীফ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। বর্তমানে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার পাশাপাশি কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়েও ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি হিসেবে কাজ করেছেন।

তিনি একজন লেখক-সাহিত্যিক। ইতিহাস নির্ভর জটিল রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক চরিত্রগুলো দিয়ে তিনি বর্তমান সময়ের মানবজীবনকে চিত্রায়িত করেন। ফলে তার সৃষ্টিশীল লেখনীতে ঐতিহাসিক চরিত্রগুলো জীবন্ত ফুটে ওঠে। একই সঙ্গে বিশ্লেষিত হয় সমসাময়িক সমাজ এবং মানব চরিত্রের দ্বন্দ্ব। বিভিন্ন পেশা, জাতীয়তা এবং সাংস্কৃতিক মানুষ তার কাজের উপজীব্য। বাঙালির প্রবাস জীবনের সামাজিক সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব নিয়ে তার সৃজনশীল গ্রন্থ ‘বাঙালির প্রবাস জীবন-অনন্তের পথে’ প্রকাশ হয় ২০১১ সালে। বিশ্ব রাজনীতির দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের আলোকময় সভ্যতার অপমৃত্যু-তবু মানুষ মুক্তির জয়গান গায়-এই নিয়ে তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘বিমর্ষ সভ্যতায় এক রুদ্র নায়ক’ প্রকাশ হয় ২০১৫ সালে। একজন সাম্প্রদায়িক মানুষ স্থান ও সময়ভেদে গিরগিটির মতন রঙ বদলায়, এই নিয়ে ‘আরুণোদয়ের অস্তাচল’ তার তৃতীয় প্রয়াস। বাংলা সাহিত্যে ‘নাটকের চতুর্থ পর্ব’- সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে তার চতুর্থ উপন্যাস।

বাংলা সাহিত্যে ‘লজ্জাহীন মৃত্যুর গল্প’ লেখকের পঞ্চম গল্প-এটি একটি সিরিয়ান বালকের মর্মান্তিক ঘটনার কথা, যে শান্তিপূর্ণ জীবন পেতে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অরক্ষিত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় মারা গিয়েছিল ।

উচ্চবর্ণের হিন্দুর দ্বারা নিম্নবর্ণের একজন হিন্দু বালিকা ধর্ষিত ও নির্যাতিত হয়। সব ধর্মের ধর্মীয় মৌলবাদী মানুষের হাত থেকে তার জীবন বাঁচানোর জন্য সে তার ধর্ম পরিবর্তন করে (হিন্দু ধর্ম থেকে খ্রিস্টান ধর্ম থেকে বৌদ্ধ ধর্ম হয়ে ইসলামে)। তবে শেষ পর্যন্ত নিজের নাম বদলেও সে বাঁচতে পারেনি। মানুষ হবার কাল্পনিক গল্প’ লেখকের ষষ্ঠ উপন্যাস ।

'উত্তম প্রাণী’ লেখকের সপ্তম উপন্যাস। ‌‘নিভে যাওয়া সকাল’ লেখকের অষ্টম প্রয়াস।

ইত্তেফাক/এসসি