বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রচণ্ড গরমে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ বাড়ছে

আপডেট : ০৭ জুন ২০২৩, ০৮:০৩

দেশ জুড়ে প্রচণ্ড দাবদাহ বইছে। এই দাবদাহে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ নানা বয়সের মানুষ। শুধু পানিবাহিত রোগই নয়, এই মৌসুমে ডেঙ্গুতেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।  পানিবাহিত এই রোগ থেকে রক্ষায় বাইরে খোলা ও বাসি খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার কথাও বলেন চিকিৎসকরা। এছাড়া কালো পোশাক পরিধান না করে ঢিলেঢালা সুতির কাপড় পরতে হবে। এতে গরম কম অনুভূত হবে।

চিকিৎসকরা বলছেন, যারা শ্রমজীবী মানুষ তারা যেন রোদে দুই ঘণ্টা কাজ করে বিশ্রাম নেন। কারণ টানা কয়েক ঘণ্টা রোদে কাজ করলে অতিরিক্ত ঘামে শরীর পানিশূন্য হয়ে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ । এ কারণে রোদে থাকলেও যেন ছাতা ব্যবহার করা হয়।

এদিকে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি)-এর তথ্যানুযায়ী, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪০০-এর মতো। বর্তমানে প্রতিদিন ৬৫০ থেকে ৭০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন ২৫০ হতে ৩০০ রোগী হাসপাতালে আসছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব রোগী চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে আসছে।

অপরদিকে গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে। তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি। যা ১৫ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এছাড়া গতকাল কুমিল্লার দাউদকান্দিতে হাবিবা নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ এখনো নির্ণয় করতে পারেননি চিকিৎসকরা। তবে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও এমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, যারা বাইরে কাজ করেন তারা যেন দুই ঘণ্টার বেশি কাজ না করেন। দুই ঘণ্টা কাজ করে ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে। গরম থেকে রক্ষায় ঢিলেঢালা জামা পরতে হবে। কারণ প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ সময়ে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। তবে খাবার স্যালাইন খাওয়া উত্তম। বাসি ও খোলা খাবার খাওয়া যাবে না। এমনকি সেটা ঘরে রান্না হলেও।

নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউটের যুগ্ম-পরিচালক ডা. বদরুল আলম বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত কোনো রোগী পাইনি। তবে এমন দাবদাহে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তো রয়েছেই। এ সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা নানা রোগে আক্রান্ত না হন।

শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়ছে চর্ম রোগও। এ সময় শিশুদের ঘরে রাখতে হবে। প্রয়োজন না হলে বাইরে যাওয়া ঠিক নয়। প্রচুর মৌসুমি ফল খেতে হবে। তবে কেমিক্যালযুক্ত ফল এড়িয়ে যেতে হবে। খাওয়া যাবে না।

আইসিডিডিআরবির সহকারী বিজ্ঞানী ড. শোয়েব বিন ইসলাম বলেন, এই গরমে প্রয়োজন না হলে ঘরে থাকাই উত্তম। বিশুদ্ধ পানি পানের পাশাপাশি ঢিলেঢালা জামা পরতে হবে। যাতে গরম কম লাগে। বাসি খোলা খাবার না খাওয়া ও বিশুদ্ধ পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত গত এক সপ্তাহ ধরে দেশ জুড়ে প্রচণ্ড দাবদাহ বইছে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য থাকায় মানুষ বেশি অস্বস্তিতে পড়েছে। শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ায় মানুষ দুর্বল হয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন