সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

‘আমি ভোট ডাকাতি করেছি বলেই আপনি উপজেলা চেয়ারম্যান’

আপডেট : ০৭ জুন ২০২৩, ২২:২৭

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কক্সবাজার শহরের ৮টি ভোট কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কায়সারুল হক জুয়েলের জয় নিশ্চিত করেছিলেন বলে দাবি করেছেন উখিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী ও হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী। কিন্তু তিনি নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে কৌশলে চেয়ারম্যান হয়েছেন।

মঙ্গলবার (৬ জুন) রাতে কক্সবাজার পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মাহবুব রহমানের সমর্থনে আয়োজিত এক সভায় যুবলীগ নেতা ইমরুল পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী নারকেল গাছ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের ছোট ভাই সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েলকে ইন্ডিকেট করে তার নির্বাচনে ৮টি কেন্দ্রে ভোট ডাকাতির এমন মন্তব্য করেন। তার এ বক্তব্যের ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে পুরো জেলায় তোলপাড় শুরু হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, ইমরুল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখল করে নৌকাকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান হয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার হাতে নির্যাতিত হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, মসজিদের ইমাম, স্কুলের শিক্ষক, শ্রমিক এবং দিন মজুর। এবার পৌরসভায় এসে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করতে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। যেটা সরকার বিরোধী। নৌকার পক্ষে বক্তব্য দিতে আসার বিপরীতে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী থেকে সুবিধা নিয়ে এমন অসংলগ্ন বক্তব্য দিয়ে থাকতে পারেন বলে অভিমত তাদের। কারণ, সুবিধার বিনিময়ে তার পরিবার নিকৃষ্টতম কাজটি করতেও দ্বিধা করে না। তার এমন বক্তব্যের জন্য তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। 

উল্লেখ্য, কায়সারুল হক জুয়েল বর্তমান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি কক্সবাজার জেলার সবচেয়ে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ পরিবার হিসেবে পরিচিত প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা একেএম মোজ্জামেল হকের কনিষ্ঠ ছেলে। তার বড়ভাই সদ্য বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মাসেদুল হক রাশেদ দলীয় মোনোনয়ন না পেয়ে নাগরিক কমিটির ব্যানারে কক্সবাজার পৌরসভায় নির্বাচন করছেন।

এদিকে যুবলীগ নেতা ইমরুলের এ বক্তব্যের ফলে ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ কায়সারুল হক জুয়েল ২০১৯ সালে প্রথম ইভিএম পদ্ধতির ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রক্রিয়া দেখাচ্ছে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কর্মীরাও। 

যুবলীগ নেতা ইমরুলের ভোট ডাকাতি করে জয় নিশ্চিত করার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শাল ও পৌর বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও ফোন রিসিভ করেননি।

তবে যুবলীগ নেতা ইমরুলের বক্ত্যবের দায় নিবে না জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা। 

জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয় কারো উদ্ভট ও ব্যক্তিগত বক্তব্যের দায় আওয়ামী লীগ নেবে না। বর্তমান সরকারের আমলে সবসময় নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে।

ভোট ডাকাতির বিষয়ে যুবলীগ নেতার বক্তব্য ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এসএম শাহাদাত হোসেন।

ইত্তেফাক/পিও