বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

বরিশাল সিটি নির্বাচন

খায়েরের ৩৫ দফা ইশতেহার আধুনিক নগর গড়ার প্রত্যয়

আপডেট : ০৮ জুন ২০২৩, ০৫:০৪

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) তার নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীর ক্রাউন কনভেনশন হলে তিনি ৩৫ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন। 

তিনি বলেন, ইশতেহারে উল্লেখযোগ্য অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে, নগরবাসীর অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযৌক্তিক হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়ন করে কর ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনায়ন এবং ট্রেড লাইসেন্স প্রদান সহজ করে অনলাইন সেবা চালু করা। নাগরিক মতামত গ্রহণ করার মাধ্যমে বাড়ির প্ল্যান অনুমোদন সহনীয়, হয়রানি ও ভীতিমুক্ত করা হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে অসম্প্রদায়িক নগর প্রতিষ্ঠা করা হবে। নগরীর সব মসজিদ ও মাদ্রাসার উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ , নগরীর সব মন্দির ও গির্জার উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান ব্যবস্থা সংস্কারসহ নতুন ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়াও নগরের খালগুলো খননের বিশেষ উদ্যোগ, বর্ধিত এলাকায় পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের উদ্যোগ ও সড়ক সংস্কার ও নতুন সড়ক নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়াও বরিশাল সিটি করপোরেশনকে সন্ত্রাস, চাঁদাবজি, দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন কলোনিবাসীর নাগরিক সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ইতিপূর্বে সম্পন্নকৃত বেলতলা ও রূপাতলী এলাকার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে পূর্ণরূপে চালু ও হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। নগরীতে নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবার জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ  ও নগরীতে গ্যাস সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তা ছাড়া বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সহায়তা প্রদানসহ সরকার প্রবর্তিত সব ধরনের ভাতা যাথাযথভাবে বণ্টন , মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে নগরীর রাস্তার নামকরণ, ইউএনডিপির অর্থায়নে পুনরায় সিডিসি কার্যক্রম চালু  এবং বরিশালকে শিল্প, বাণিজ্য ও পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ মল্লিক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও নৌকার নির্বাচনি পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, নির্বাচনি দপ্তর প্রধান অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসাহাক আলী খান পান্না, মহানগর যুবলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহামুদুল হক খান মামুন, নির্বাচন পরিচালনা উপদেষ্টা কমিটির সদস্য প্রফেসর জিয়াউল হক, প্রফেসর শাহ সাজেদা, প্রফেসর ননী গোপাল দাস, জাসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিন মিয়া, জাতীয় পার্টি-জেপির মহানগর সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সুলতান, বি এম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মঈন তুষার।

  • বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এবং কাউন্সিলর প্রার্থী শরীফ আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আদালতে নালিশি মামলা করেছেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতা। গতকাল বুধবার সাইবার ট্রাইব্যুনালে নালিশি অভিযোগ দেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগরের ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক আরিফুর রহমান। ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. ফারুক হোসেন নালিশি অভিযোগ তদন্ত করে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসিকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আদালতের পিপি ইসতিয়াক হোসেন রুবেল। এর আগে মঙ্গলবার রাত ১১টায় এ অভিযোগ কোতোয়ালি মডেল থানায়ও জমা দিয়েছিলেন বলে জানান ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মিডিয়া উপ-কমিটির সদস্য কে এম শরীয়াতুল্লাহ। 

নালিশি অভিযোগের বরাতে বেঞ্চ সহকারী নুরুল ইসলাম কাকন জানান, বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখার প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করীমের সমর্থন দেখে বিবাদী তার অজ্ঞাত নেতাদের নির্দেশনা বাস্তাবয়ন করতে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভ্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছেন। এতে হাতপাখার প্রার্থী প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন। প্রার্থীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। আসামি ইসলামী আন্দোলনের অনুভূতি ও মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারায় অপরাধ করেছে।

  • টাকাওয়ালাদের প্রভাব বাড়ছে : সুজন

গতকাল দুপুরে বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা মিলনায়তনে সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক বরিশাল জেলা ও মহানগর কমিটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার লিখিত বক্তব্যে বলেন, এবারের বরিশাল সিটি নির্বাচনে ১৬৮ জন প্রার্থীর মধ্যে চার জন ধর্মীয় সংঘ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে প্রার্থী হয়েছেন। অন্যান্য মতো নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ করা যাচ্ছে। এই প্রবণতা নির্বাচনে অর্থের ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষণ। পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়ীদের আধিক্য এবং অন্যান্য পেশার প্রতিনিধিত্ব হ্রাস পাওয়া ইতিবাচক নয়, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্তার জন্যও মঙ্গলজনক নয়। এছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় ২০২৩ সালের নির্বাচনে স্বল্প আয়ের প্রার্থীর হার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। অপরদিকে ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় কম সম্পদের মালিকদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৫৮ দশমিক ০৮ ভাগ প্রার্থী ছিলেন ৫ লাখ টাকার কম সম্পদের মালিক। এবারের নির্বাচনে এই হার ২৯ দশমিক ৩৪ ভাগ। অপরদিকে বিগত নির্বাচনে কোটিপতির হার ৮ দশমিক ০৮ থাকলেও এবারের নির্বাচনে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বিশ্লেষণে বলা যায় যে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্বল্প সম্পদের মালিকদের হার যেমন হ্রাস পাচ্ছে, তেমনই অধিক সম্পদের মালিকদের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে সুজন বরিশাল জেলা মহানগর কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ইত্তেফাক/ইআ