বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

টার্ফ স্থাপনে অনুকরণীয় উদ্যোগ

আপডেট : ০৮ জুন ২০২৩, ১০:৫৪

এক সময় নিজেরা খেলাধুলা করতেন। কিন্তু দেশের জার্সি গায়ে আকাশ স্পর্শ করতে পারেননি তারা। কিন্তু মনের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা ছিল খেলা নিয়ে কিছু করবেন। সেই স্বপ্নটাই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন মুক্তার আহমেদ ভুঁইয়া খোকন এবং মইনুল হোসেন তপু। রাজধানীর বুকে গড়ে তুলেছেন স্পোর্টস জোন। রিভারশোর স্পোর্টস অ্যারেনা। ফুটবল টার্ফ স্থাপন করেছেন। এক মাসও হয়নি, এখনো বিস্তর কাজ বাকি। তার আগেই ফুটবলপ্রেমীরা ভিড় জমিয়ে দিয়েছেন খেলার জন্য। এখন গভীর রাত পর্যন্ত খেলা হয় সেখানে। খেলার জন্য মাঠ বুকিং দেওয়া নিয়ে হয় টেনশন। দেশের দূর-দূরান্ত হতে ফুটবল খেলতে ছুটে আসেন নানা বয়সের খেলা পাগল মানুষ।  

ইট কাঠ পাথরের শহরে এক বুক নিঃশ্বাস নেওয়াই যেখানে কঠিন হয়ে পড়েছে, সেখানে খোলা জমিতে খেলার মাঠের আয়োজন করার সাহস কজনার আছে। খোকন-তপুরা নিজের চিন্তা-চেতনা ছড়িয়ে দিলেন মাঠ করবেন বলে। মাত্র আট বিঘা জমির ওপর গড়ে তুললেন খেলার ময়দান। 

রাজধানীর সিকদার মেডিক্যাল কলেজের পাশে সালাম সর্দার রোডের কাছে রিভারশোর স্পোর্টস অ্যারেনা। এক দেখায় নজর কাড়বে। বুড়িগঙ্গা নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে উঠা স্পোর্টস জোনের ছবিটা এখন রং ছড়াতে শুরু করেছে। তারপরও এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা খোকন এবং তপু বলছেন, তারা এখনো শুরু করেননি। অনেক কাজ বাকি রয়েছে। দেখালেন মূল নকশা। এটিকে সম্পন্ন করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন; কোথা থেকে আসবে সেই অর্থ, তা নিয়ে মোটেও দুশ্চিন্তা করছেন না তারা। কথা একটাই, খেলাধুলার জায়গা বের করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে খেলার সুযোগ দিতে হবে। খোকন বলছিলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ছুটে আসেন খেলতে। ৯০ মিনিট খেলে একটা নামমাত্র ফি জমা দিয়ে যান। খেলা শেষে তাদের কাছে অর্থটা যেন কিছুই না, তাদের কাছে খেলার আনন্দটাই সবচেয়ে বেশি।’ 

মইনুল বললেন, ‘ফেসবুকে দেখে ছেলেরা অনেক দূর হতে আসছেন। দুই দল ম্যাচ খেলবে। যে হারবে তারা মাঠের ভাড়া দেবে। এমন দলকে আমরা খেলতে দেখেছি। গতকাল বিকালে এই রিভারশোর স্পোর্টস অ্যারেনায় বিদেশি ফুটবলার খেলতে দেখে গেছে। ইংলিশ ফুটবলে খেলেছেন এমন ফুটবলার এসেছেন বাংলাদেশি বন্ধুর হাত ধরে। 

ইংলিশ ফুটবলার ম্যাকসিম জানালেন, তিনি প্রিমিয়ার লিগে খেলেননি। বললেন, ‘আমি ইংলিশ ফুটবলে খেলেছি। এখানে এসে দারুণ ভালো লাগল।’ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সিলেটের সন্তান তাফ রহমান ৯৬ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত আর্সেনালের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলেছেন। ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২০ দলের কোচিং স্টাফ হয়ে কাজ করেছেন। তাফ রহমান কাল সেই মাঠে গিয়ে ফুটবল খেললেন। 

তাফ রহমান জানালেন, তিনি এখন ইংলিশ এফএ’র সঙ্গে কাজ করছেন। বাংলাদেশের আরেক ফুটবলার, বাংলাদেশ বয়েজে খেলেছেন। স্কটল্যান্ডে পড়ালেখা করতে গিয়ে খেলেছেন সেখানকার চতুর্থ বিভাগের লিগে, এডিনবার্গ ইউনির্ভাসিটি অ্যাসোসিয়েশনে খেলেছেন। বিকালে, সন্ধ্যায় যখনই খেলা হয় আশপাশের দর্শক ভিড় করে। এই স্পোর্টস জোনটি এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে দেখলে মনে হবে কোনো পেশাদার ক্লাবের মাঠ। ড্রেসিং রুম, ওয়াশরুম থেকে শুরু করে যা কিছু প্রয়োজন তা প্রস্তুত। নির্মাণকাজে আধুনিকতার ছোঁয়া রয়েছে। অনেকেই এসে ছবি তুলছেন। গুণাগুণ নিয়ে প্রশংসা করছেন।

চীন থেকে আনা হয়েছে ফুটবল টার্ফ। বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে টার্ফ আনতে গিয়ে ভোগান্তি পোহালেও মান বজায় রাখতে সব মেনে নিয়েছেন খোকন। টার্ফে তিন স্তরের ঘাস। ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নত। পানি জমবে না।  

বন্ধু-বান্ধবরা বলেছিলেন নদীর পাশে রেস্টুরেন্ট করতে। ব্যবসা হবে। টাকা আয় হবে। টাকার দিকে না তাকিয়ে বড় ভাই ছোট ভাই থেকে কাছের বন্ধু হয়ে যাওয়া খোকন এবং মইনুল জুটি ঠিক করলেন তারা খেলার জায়গা বানাবেন। টাকা বানাবেন না। জাতি গঠনে কাজ করবেন। তরুণদের ডেকে আনবেন মাঠে। কারো কথা না শুনে হাঁটলেন সেই পথে। এমন সাজানো গোছানো পরিকল্পনা ছবির মতোই ফুট উঠছে। আর তা দেখে আশপাশের এলাকার মানুষেরও চোখ এখন সুন্দরের দিকে। মইনুল-খোকনদের এমন উদ্যোগ এখন অনুকরণীয় হয়ে উঠছে।

ইত্তেফাক/এসএস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন