শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বরিশাল সিটি নির্বাচন

প্রচারণার শেষ মুহুর্তে ৪ প্রার্থীকে নিয়ে চলছে ভোটের হিসাব-নিকাশ

আপডেট : ০৯ জুন ২০২৩, ১৪:১৪

প্রচারণার শেষ মুহুর্তে প্রার্থীরা এখন ভোটের হিসাব-নিকাশ কষতে শুরু করেছেন। গণসংযোগের ফল মিলিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় ও এলাকাভিত্তিক ভোট ভাগাভাগির পাশাপাশি বর্ধিত নগরী ও বস্তির ভোট নিয়ে এখন যোগ-বিয়োগ চলছে। দীর্ঘদিনের নির্বাচনের রেওয়াজ অনুযায়ী রাজনৈতিক বিবেচনায় ভোট ভাগাভাগি হত। এবার রাজনৈতিক ভোটের চেয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ ভোটারের সংখ্যাই বেশি। 

এ বছর নগরীতে নতুন তালিকা অনুযায়ী, ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার দুই শত ৯৮ ভোটার। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটার ছিল ২ লাখ ৪২ হাজার ১ শ’ ৬৬ জন। এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন না করায় বিএনপি’র ভোট ভাগাভাগি নিয়ে চলছে আলোচনা। ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি মোট ভোটের প্রায় ৪০ ভাগ পেয়েছিল। সে সময়ে বিএনপির প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল ৮৩ হাজার ৭৫১ ভোট পেয়ে জনপ্রিয় সাবেক প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরনকে বিপুল ভোটে হারিয়ে ছিলেন। এই ইতিহাসের আবার পুন:রাবৃত্তি ঘটাতে চান সাবেক বিএনপির মেয়র আহসান হাবিব কামাল এর ছেলে মো. কামরুল আহসান রুপন। যদিও তিনি স্বতন্ত্রভাবে দাঁড়িয়েছেন, এরপরেও বিএনপি তাকে সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সদস্য হিসেবে বহিস্কারও করেছে। তিনি নিজেকে বিভিন্ন গণসংযোগে ‘বিএনপি পরিবারের সদস্য’ হিসেবে ভোট চেয়েছেন। কিন্তু বিএনপি এই ভোটের সঙ্গে সংশ্লিস্ট নেই। এই ভোট প্রদান করাকেও নিবৃত্ত করতে চায় বলে জানান মহানগর বিএনপির সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান ফারুক।

রহমান স্বপন বলছেন, নেতৃত্ব পর্যায়ে ভোট দেওয়া নিরুৎসাহিত করা হলেও বিএনপির ১৮ জন পদাধিকারী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছে, সেসব কারণে বলা যায়, বিএনপি এই নির্বাচনে আছে ও বিএনপির ভোটাররা এই নির্বাচনে কিছুটা কম সংখ্যক হলেও ভোট দিতে যাবেন। বিএনপির এই সিটিতে প্রায় লাখ ভোটার রয়েছে। তবে তারা সবাই বিএনপির রাজনীতি সংশ্লিস্ট না হলেও বিএনপির প্রার্থীকে ভোট দিয়ে থাকেন।

লাঙল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের গণসংযোগ: ছবি: ইত্তেফাক

জাতীয় পার্টির প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অধ্যক্ষ মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, মেয়র প্রার্থীর মধ্যে জাপা প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস যুবদল নেতা তছলিম উদ্দিনের ভাই, তা ছাড়া বিএনপি আদর্শগত ভাবে জাপার কাছাকাছি, সে হিসেবে বিএনপি কেন্দ্রীক একটি ভোট জাপা পাবে বলে আশা করছেন এই নেতা।

অপরদিকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থী এবারে বিএনপি কেন্দ্রিক ভোটারদের দ্বারে দ্বারে বেশি ঘুরেছেন বলে একটি বিশ্বস্তসূত্র জানায়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, আমি আশা করছি- বিএনপির ভোট পাব, ইসলামী রাজনীতিকে যারা ধারন করেন, এই ধরনের ভাসমান ভোটাররা এবার বিএনপির প্রার্থী না থাকায় হাত পাখাকে সমর্থন করতে পারেন।

হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মুফতী ফয়জুল করীম এর গণসংযোগ। ছবি: ইত্তেফাক

বিভিন্ন ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় পার্টি লাঙল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস ও দেয়ালঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন বিএনপি’র ভোটারদের মন জয় করতে নানান প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এ দুই প্রার্থী ভোটের দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে এজেন্ট নিয়োগসহ বিভিন্ন কাজ বিএনপি’র ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ব্যবহার করছেন। 

অপরদিকে, হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতী ফয়জুল করীম ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ভোটারদের মন জয় করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। যদিও তার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে সিটির ভোটার সংখ্যা কম। তারপরও তারা ধর্মীয় নানান শ্লোগান দিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের নতুন মুখের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ মনোনয়ন পেয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যেই দলের বর্তমান ও সাবেক নেতাসহ দলের বাইরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মিশতে পেরেছেন। প্রার্থী ও তার সহধর্ণীনি, ছেলে সহ নিকটাত্মীয় সহ স্থানীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দিন-রাত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। 

দেয়ালঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল কেন্দ্রীয় নেতা কামরুল আহসান রূপন এর গণসংযোগ। ছবি: ইত্তেফাক

প্রসঙ্গত, এবারের নির্বাচনে ৩০ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ১১৯ জন এবং সংরক্ষিত ৪২ জন। এতে ১২৬টি ভোটকেন্দ্রে ২ লাখ ৭৬ হাজার দুই শত ৯৮ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন ও পুরুষ ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন। তফসিল অনুযায়ি, আগামী ১২ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আর এর মধ্যে থেকে নগরবাসী ১ জন মেয়র সহ ৪০ কাউন্সিলর নির্বাচিত করবে।

ইত্তেফাক/কেকে