দেশের কিংবদন্তি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নূরুল ইসলাম স্মরণে আয়োজিত সভায় বক্তারা বলেছেন, দেশের অর্থনীতিতে তার অবদান অবিস্মরণীয়। দৈনিক ইত্তেফাকের সহযোগিতায় ও বাঙলার পাঠশালার উদ্যোগে এই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার অডিটোরিয়ামে আয়োজিত স্মরণসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও বাঙলার পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জাভেদের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। আরো উপস্থিত ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ড. সাজ্জাদ জহির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. অতনু রব্বানী, ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভার্সিটি বিভাগের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী, আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. মেহরাব বখতিয়ার ও দৈনিক প্রথম আলোর ত্রৈমাসিক প্রতিচিন্তার সহকারী সম্পাদক খলিলুল্লাহ জীবন।
ড. মসিউর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতিতে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের অবদান অবিস্মরণীয়। লাহোরে যখন বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবিকে অস্বীকার করা হলো সেখান থেকে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু নূরুল ইসলামের সঙ্গে আলাপ করেন। একবার কিছু গোপন নথিপত্র খন্দকার মোশতাক পাকিস্তানিদের কাছে ফাঁস করে দেন। সেই খবর যখন নূরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুকে দেন বঙ্গবন্ধু তখন খুব ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। নূরুল ইসলাম তার বইতে এই বিষয়ে লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু ঠান্ডা মাথায় কঠিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরো বলেন, তিনি সমস্যার মূল জায়গায় পৌঁছাতে পারতেন, যার কারণে কঠিন অবস্থাও তিনি শান্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নূরুল ইসলাম বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করেছেন বলে তিনি জানান। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতির মোট পরিমাণ নূরুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন। শুধু আর্থিক নয়, মেধার বিনষ্টের কথাও তিনি বলেছেন।
ড. শামসুল আলম বলেন, উন্নয়নশীল দেশ নিয়ে বই পড়তে গিয়ে অধ্যাপক নূরুল ইসলামকে ব্যাপকভাবে জানার সুযোগ হয়েছে। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নূরুল ইসলামসহ আরো অর্থনীতিবিদ এক বছরে করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে এত অল্প সময়ে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা করা, যা একবারেই অসম্ভব। তখন পরিকল্পনা প্রণয়নের মতো সম্পদ, প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি ছিল না কিন্তু তাদের যোগ্যতা দৃঢ় মনবল না থাকলে এটি সম্ভব ছিল না। ভারতের স্বাধীনতার তিন বছর পর পরিকল্পনা পরিষদ তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে ৩০ দিনের কম সময়ে তা হয়েছে। পরিকল্পনা পরিষদ বাংলাদেশের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি ছিল। নূরুল ইসলামসহ যারা পরিকল্পনা পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা শুধু অর্থনীতিবিদ ছিলেন না, তারা জাতীয়তাবাদ বিকাশে অবদান রেখেছেন।
তাসমিমা হোসেন বলেন, ‘তার একটি বই পড়তে পড়তে মনে হলো—বর্তমান প্রজন্মের নূরুল ইসলাম সম্পর্কে পড়া উচিত, যারা দেশ সম্পর্কে জানতে চায়। তিনি সব সময় তরুণদের নিয়ে চিন্তা করতেন। এই বইটি বিশ্লেষণধর্মী, মন দিয়ে পড়া গেলে অনেক কিছু জানতে পারবে আমাদের তরুণরা। অধ্যাপক নূরুল ইসলাম যেহেতু বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন, বইটিতে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কেও সুন্দর ধারণা পাওয়া যাবে। খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক কেমন ছিল—এমন কিছু চমত্কার বিষয়ের বর্ণনা পাওয়া যাবে বইটিতে। এছাড়াও একটি জাতিরাষ্ট্র গঠনকালে একজন অর্থনীতিবিদ কীভাবে চিন্তা করেছেন তা জানা যাবে। কীভাবে স্বাধীনতা পেলাম, স্বাধীনতার পূর্বের অবস্থা জানতে, সত্যকে জানতে হলে নূরুল ইসলাম সম্পর্কে পড়তে হবে ও জানতে হবে।’