সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

রাবি অধ্যাপক ড. তাহের হত্যা

খুনিদের ফাঁসি ঠেকাতে ঠুনকো অজুহাতে রিট, চেষ্টা বিফল

খারিজ আদেশের কপি পেলেই কার্যকরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করবে কারা কর্তৃপক্ষ

 

আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২৩, ০৫:৩০

সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন। নাকচ হয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো প্রাণভিক্ষার আবেদনও। মঞ্চ প্রস্তুত। কিন্তু ঠুনকো অজুহাতে ফাঁসি ঠেকাতে করা হলো দুই দফায় রিট। সেই রিট আবেদনও হাইকোর্টে সরাসরি খারিজ হওয়ায় খুনিদের ফাঁসি ঠেকানোর সব চেষ্টাই বিফলে! 

এখন ক্ষণ গণনা ফাঁসির রায় কার্যকরের। অপেক্ষায় ভিকটিম ও আসামির পরিবার। সবকিছু ঠিক থাকলে দ্রুতই দিন ধার্য করে স্বজনদের সাক্ষাতের সুযোগ দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (চূড়ান্ত বরখাস্ত) ও কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ। পদোন্নতিতে বাধা হতে পারেন, এমন অমূলক আশঙ্কা থেকেই রাবির ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এস তাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এই খুনের পরিকল্পনা করেন ড. তাহেরের সহকর্মী শিক্ষক মহিউদ্দিন। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন জাহাঙ্গীরসহ আরও দুই খুনি। এখন এই দুই খুনিকে রাখা হয়েছে কনডেম সেলে। সেখানে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। রিট খারিজ আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি হাইকোর্ট থেকে কারাগারে পৌঁছালে ফাঁসি কার্যকরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করবে কারা কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. নিজামউদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, রিট খারিজের তথ্য আমরা জেনেছি। এখন আদালতের আদেশের কপি হাতে পেলেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ফাঁসি কার্যকরের দিনক্ষণ ঠিক করব। এর পরই ফাঁসি কার্যকর করা হবে।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী বলেন, সর্বোচ্চ আদালতে রিভিউ নিষ্পত্তির পর এ ধরনের রিট আবেদন আদালত অবমাননার শামিল। যে আইনগত বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে, তা আগেই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। যখনই ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়, তখনই রায় কার্যকর বিলম্ব করতে আসামিরা এ ধরনের রিট করেন। মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। এই মামলার চার্জশিটে বলা হয়, ড. তাহের জীবিত থাকলে কখনোই পদোন্নতি পাবেন না এমন ধারণা থেকেই ষড়যন্ত্র ও খুনিদের প্রলোভন দিয়ে তাকে খুন করান মিয়া মো. মহিউদ্দিন। এরপর তার পরিকল্পনা মোতাবেক খুনিরা ড. তাহেরকে হত্যা করে লাশ ম্যানহোলে ফেলে দেন। ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল চারজনকে ফাঁসির আদেশ দেয়। হাইকোর্ট ২০১৩ সালে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের ফাঁসি বহাল রাখে। সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়া হয় নাজমুল ও সালামকে। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। 

রায়ে বলা হয়, এই হত্যাকাণ্ড ছিল নিষ্ঠুর প্রকৃতির। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী শিক্ষককে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা দেশের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড ছিল নজিরবিহীন মহা অপরাধ।

এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে তিন আসামির করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। রিভিউ খারিজের আদেশ কারাগারে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান আসামিরা। সেই প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকচ হয়ে যায়। নাকচের সেই চিঠি গত ৬ জুলাই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। জেল কোড অনুযায়ী চিঠি হাতে পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে যে কোনো ফাঁসি কার্যকরের নিয়ম রয়েছে।

এই চিঠি পৌঁছার পরই ফাঁসি স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন খুনি জাহাঙ্গীরের ভাই। এতে ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি থেমে যায়। তবে কোনো সারবত্তা না থাকায় রিটটি গতকাল সোমবার সরাসরি খারিজ করে দেয় বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালত বলে, ফাঁসি বহাল রেখে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছে, সেখানে আমাদের হাত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এর আগে গত মে মাসে খুনি মহিউদ্দিনের স্ত্রী ও জাহাঙ্গীরের ভাই ফাঁসি ঠেকাতে হাইকোর্টে আরেকটি রিট করেন। ঐ রিট খারিজ করে বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. বশিরউল্লাহর দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ বলে, এ ধরনের ফৌজদারি মামলায় আপিল বিভাগ কর্তৃক আপিল ও রিভিউ পিটিশন নিষ্পত্তির পর রিট আবেদনের কোনো সুযোগ নেই।

ইত্তেফাক/এমএএম