শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

কিডনি বিক্রি করে প্রতারিত হয়ে নিজেই গড়ে চক্র

আপডেট : ২১ জুলাই ২০২৩, ০৩:৪৮

কিডনি কেনাবেচায় জড়িত পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। র‍্যাব বলছে, এদের দলনেতা আনিছুর রহমান নিজের কিডনি বিক্রি করে প্রতারিত হয়ে পরে একটি চক্র গড়ে তোলেন। গত বুধবার রাতে রাজধানীর ভাটারাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান র‍্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ। 

যারা ধরা পড়েছেন তারা হলেন আনিছুর রহমান, আরিফুল ইসলাম রাজিব, সালাউদ্দিন তুহিন, সাইফুল ইসলাম ও এনামুল হোসেন। র‍্যাব জানিয়েছে, আনিছুর বাকি চার জনের নেতা এবং সাইফুল ইসলাম একটি ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিক। আনিছুরের বাড়ি টাঙ্গাইলে, রাজিবের পিরোজপুরে এবং অন্যদের বাড়ি চাঁদপুরে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আনিছুর ২০১৯ সালে ভারতে গিয়ে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করেন। এক জন দালাল তাকে প্রলুব্ধ করেছিলেন। আনিছুরের দাবি, যাকে তিনি কিডনি দিয়েছেন, তার কাছ থেকে যত টাকা নেওয়া হয়, তার চেয়ে তাকে দেওয়া হয় অনেক কম। র‍্যাবের ভাষ্য, ভারতে কিডনি প্রতিস্থাপনে রোগীদের ব্যাপক চাহিদা আছে ভেবে পরে নিজেই একটি চক্র গড়ে তোলেন আনিছুর। ভারতে যারা এই কারবারে জড়িত, তাদের সঙ্গে গড়ে তোলেন সখ্য।

র‍্যাব-১-এর অধিনায়ক বলেন, অনলাইনে বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে ডোনার বা দাতা সংগ্রহ করে বৈধ ও অবৈধভাবে বিমানে বা স্থলপথে ২০১৯ সাল থেকেই ভারতে পাঠাতে শুরু করেন আনিছুর। পাঁচ জনকে গ্রেফতারের পর কিডনিদাতা ও গ্রহীতার ভুয়া অঙ্গীকারনামা, চুক্তিপত্র, পাসপোর্ট, এটিএম কার্ড, ভারতীয় রুপি, বাংলাদেশি টাকা জব্দ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক জানান, কিডনি গ্রহীতা বিত্তশালী হলে প্রতি কিডনিতে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকাও নেওয়া হতো। কিন্তু কিডনিদাতাকে দেওয়া হতো ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। ভারতের চক্রটি বাকি টাকার প্রায় অর্ধেক নিয়ে যেত। বাকি টাকার বেশির ভোগ রাখতেন আনিছুর। চক্রটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ জনের কিডনি কেনাবেচা করেছে জানিয়ে র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা মানুষকে টার্গেট করে টাকার লোভ দেখাতেন তারা। অসুস্থদের বিনা মূল্যে চিকিত্সার কথা বলেও ফাঁদে ফেলতেন।

চক্রটি কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করে জানিয়ে র‍্যাব কর্মকর্তা জানান, একটি দল সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আরেকটি দল অভাবে থাকা মানুষের সঙ্গে কথা বলত। ট্রাভেল এজেন্টের মালিক সাইফুলের নেতৃত্বে অপর দলটি রোগীদের ভারতে পার করত। তারা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে জাল কাগজপত্রও তৈরি করত। আনিছুর ঢাকায় বসে টাকা লেনদেনের বিষয়সহ পুরো বিষয়টি তদারকি করতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কিডনি কেনাবেচা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে র‍্যাব কর্মকর্তা জানান, চক্রের যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে ঐ ঘটনার কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।

ইত্তেফাক/এএইচপি