বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

পদ ছাড়াই পদোন্নতি পাচ্ছেন ঢাবির কর্মচারীরা!

আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ০৬:০০

প্রতিষ্ঠিত পদ ব্যতীত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পদোন্নতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (নন-টেকনিক্যাল) পদোন্নতির নীতিমালা ২০১১ অনুসরণে কর্মচারীদের তৃতীয় শ্রেণি সমমান পদমর্যাদা দিয়ে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে যা তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী (নন-টেকনিক্যাল) পদোন্নতির নীতিমালা ২০০৪ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী (১৬ থেকে ৪ গ্রেড) পদোন্নতির নীতিমালা ২০২০ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাদের স্বীয় পদকে তৃতীয় শ্রেণি সমমান পদমর্যাদা দিয়ে আপগ্রেড করা হচ্ছে। এভাবে তারা পদোন্নতি পেতে চতুর্থ গ্রেড পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছেন। ২০১১ থেকে এ পর্যন্ত ৫ শতাধিক কর্মচারীকে সাংঘর্ষিক এই নীতিমালায় পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মচারীদের লিস্টে দেখা যায়, শুধু নন-টেকনিক্যাল না টেকনিক্যাল কর্মকর্তারাও এভাবেই পদোন্নতি পাচ্ছেন। বেলম্যান, ল্যাবরেটরি অ্যাটেন্ডেন্ট, ড্রাইভাররা পদোন্নতি পেয়ে টেকনিক্যাল অফিসার হয়ে গেছেন। এছাড়া নন-টেকনিক্যাল কর্মচারী থেকে বাগানমালি, সিকিউরিটি গার্ড, সুইপার, মালি, পিয়নরাও ২০১২ সাল থেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন। তাদের মধ্য থেকে এবার অনেকেই নবম গ্রেডের পদোন্নতি পাওয়ার জন্য আবেদন করবেন। অর্থাৎ তারা প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হয়ে যাবেন। এভাবে পদোন্নতি পেতে থাকলে তারা ডেপুটি রেজিস্ট্রার পর্যন্ত হয়ে যেতে পারবেন। ইতিমধ্যেই কর্মচারীরা প্রমোশন পেয়ে অফিসার হওয়ায় রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে কাজের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এই বছর টেকনিক্যাল ও নন-টেকনিক্যালের শতাধিক কর্মচারী পদোন্নতির অপেক্ষায়। এই পদোন্নতি পেলে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে কাজের মধ্যে আরও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীর (১৬ থেকে ৪ গ্রেড) পদোন্নতি নীতিমালা ২০২০ এর  ১ নম্বর অনুচ্ছেদের ‘ক’ শর্তে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক বা সমমানের পদে আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে পদোন্নতির শর্ত এর কলামে ‘প্রযোজ্য নয়’ উল্লেখ আছে। তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী পদন্নোতির নীতিমালা ২০০৪ এর ১ (খ) ধারায় নিম্নমান সহকারী বা সমমান পদে আপগ্রেডেশনের কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ আছে। আর চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারীদের পদোন্নতির নীতিমালা অনুযায়ী তারা তৃতীয় শ্রেণি হিসেবে পদোন্নতি পাবেন যা উপরে উল্লেখিত দুই নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এছাড়া এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী তৃতীয় শ্রেণি হিসেবে পদোন্নতি পেলেও তিনি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ন্যায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাপড়, জুতা, ছাতা, ধোলাই ভাতা, সেলাই ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন যা তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত কোনো কর্মচারী পান না। একই সঙ্গে তিনি তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী হিসেবে  তোয়ালে ও সাবান পেয়ে থাকেন। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী পদোন্নতির নীতিমালায় আপগ্রেডকৃত কর্মচারী তার পূর্বের কাজ করতে বাধ্য থাকিবে বলে উল্লেখ আছে। কিন্তু এক জন তৃতীয় শ্রেণিতে পদোন্নতি পাওয়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে কমান্ড দিলে তারা শুনতে চান না। তারা নিজেদের সিনিয়র বলে দাবি করে। এসব অভিযোগ করেন তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত একদল কর্মচারী।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারীদের বাসা বরাদ্দ নিয়ে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। পদোন্নতিপ্রাপ্ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা সিনিয়রিটির ভিত্তিতে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের বাসা বরাদ্দ পেয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা বাসাই পাচ্ছেন না। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা বলেন, ‘আমরা নিজেরাই কোণঠাসা হয়ে পড়ছি আমাদের সমিতিতে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরাই তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতিভুক্ত হচ্ছে বেশি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স করে তৃতীয় শ্রেণির পদে চাকরিতে ঢুকেছি। আমাদের তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতিতে আমরা নিজেরাই সংখ্যালঘু। সমিতিতে অধিকাংশই চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তাদের কমান্ড দিলে শুনতে চায় না। কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না থাকার পরেও তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে এসে পদোন্নতি নিচ্ছেন।  ’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা পরিবর্তনযোগ্য। পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে বিশ্ববিদ্যালয় তা পরিবর্তন করে নিতে পারবে।’ এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এই নীতিমালা নিয়ে কাজ করব। হঠাৎ করেই কোনো কিছু তো একেবারেই পরিবর্তন করা যায় না।’

ইত্তেফাক/এমএএম