পাবনার পেঁয়াজ বাজার ঊর্ধ্বমুখী। সপ্তাহ দুয়েক আগেও জেলার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম চাওয়া হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। শনিবার ভারতের শুল্ক আরোপের খবরের পর থেকে বাজার কিছুটা চড়তে থাকে। পাবনা শহরের বড় বাজার, মাসুম বাজার, আতাইকুলা, একদন্ত, সুজানগর, টেবুনিয়া, হাজিরহাট, সাঁথিয়া, বেড়ার করমজাসহ বেশ কয়েকটি হাট-বাজারে খোঁজ নিয়ে এ দর জানা গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা থেকে ৭০ কেজি দরে।
স্থানীয় কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাবনার সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা হলো সুজানগর। এর পরই সাঁথিয়ার অবস্থান। সুজানগর উপজেলায় এবারের মৌসুমে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ১৬০ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। সাঁথিয়া উপজেলায় ১ লাখ ৮৮ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। গত দুই সপ্তাহ আগে সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলার হাটগুলোতে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি কয়েছে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। গেল মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা মণ দরে। এভাবে বাড়তে থাকলে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য পেঁয়াজ কেনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শেখ জামাল উদ্দিন আহম্মেদ জানান, পাবনা জেলায় এ বছর ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৫৬৮ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। বর্তমানে কৃষকের ঘরে ৮৯ হাজার ৬৫৫ টন পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। এছাড়া আগামী সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে মূলকাটা পেঁয়াজ লাগানো শুরু হবে।
গতকাল বুধবার কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা কলেজশিক্ষক আরিফ সিদ্দিকী বললেন, ‘গত শুক্রবার পেঁয়াজ কিনলাম ৬৫ টাকা কেজিতে। আজকে বলছে ৮০ টাকা কেজি। কয় দিনের ব্যবধানে দেশে এমন কী ঘটল যে, পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে যাবে। আবারও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন। আমাদের পকেট খালি করছেন।’
মধ্যশহরের কাঁচাপণ্য ব্যবসায়ী নান্নু মিয়া বলেন, ‘শনিবারও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৫০ টাকা কেজি। মাঝারি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। আর ভালো মানের আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৬০ টাকা কেজি। আজকে আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৭০ টাকা কেজি। আমাদের কেনাই পড়েছে ৬৪ টাকা কেজি।’
সাঁথিয়া উপজেলার বোয়ালমাড়ী গ্রামের কৃষক সোনাই আলী জানান, ‘কয়েক দিন ধরে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। এতে কৃষকরা উপকৃত হয়েছেন। পেঁয়াজ আবাদের খরচ হিসেবে পেঁয়াজের বর্তমান বাজার কৃষকের জন্য সুবিধাজনক। তবে সারা বছর পেঁয়াজের দাম এমন থাকলে কৃষকরা বেশি লাভবান হতেন।’ একই উপজেলার মিয়াপুর গ্রামের কৃষক শামীম হোসেন বলেন, ‘এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ায় কৃষকের কোনো লাভ নেই। কারণ এখন বেশিরভাগ পেঁয়াজ মজুতদার বা মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। তাই দাম বাড়ায় ভালোটাও তাদেরই বেশি হয়। হাতে গোনা দুই-একজন কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ মজুত থাকে। তারা একটু লাভবান হন।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনা কার্যালয়ের উপপরিচালক জামাল উদ্দীন ইত্তেফাককে বলেন, অক্টোবরের শেষ দিকে এ এলাকায় আগাম জাতের পেঁয়াজের আবাদ শুরু হবে। আর সেই পেঁয়াজ উঠতে আরও মাস তিনেক সময় লাগবে। অর্থাৎ স্থানীয় নতুন পেঁয়াজ উঠতে এখনো পাঁচ থেকে ছয় মাস দেরি আছে। কৃষকের ঘরে থাকা পেঁয়াজ দিয়েই কিছুদিন চলবে।’