শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

স্মৃতির পাতায় বেকার হোস্টেল

আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ১৮:১৪

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টুঙ্গিপাড়ার গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ায় হাতেখড়ি নেওয়ার পর বাবার কর্মস্থল মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল  ও গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। পরে তিনি ১৯৪২ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতার ওয়েলেসলি স্কয়ারের ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমান মাওলানা আজাদ কলেজ) মানবিক বিভাগে ভর্তি হন। কলকাতার তালতলার স্মিথ লেনে অবস্থিত সরকারি বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধু রুম নং ২৪-এর আবাসিক ছাত্র ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯৪৬ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসে অনার্সসহ ব্যাচেলার ডিগ্রি লাভ করেন।

কলকাতা ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন আমাদের গন্তব্য জাতির পিতার স্মৃতিধন্য স্থান সেই বেকার হোস্টেল। সকাল সাতটায় আমি আর আমার মা বের হলাম। এখানে ঢাকা শহরের মতই সবাই কর্মব্যস্ত। যাত্রাপথে দেখা মিলল টি স্টলের। মা সকালে চা খেয়ে অভ্যস্থ। আজ সকালে চা খাওয়া হয়নি, তাই চা স্টল দেখেই চা খাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ওঠলেন। আমিও না বললাম না। আমি খুব একটা চা খাই না, তারপরও মাটির ভাঁড়েতে চা দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। তারপর কলকাতা নিউমার্কেট পার হয়ে আমরা এগিয়ে চলছি প্রায় দুই কিলোমিটার। এবার পৌঁছালাম  তালতলায়। এর কিছুদূর যাবার পরই চোখে পড়ল বেকার হোস্টেলের বিরাট সাইনবোর্ড। সামনে এগিয়ে গেলে সবুজ রঙের লোহার গেট পার হলেই ভেতরে বেশ পুরানো স্থাপনা। অনেকটা জায়গা জুড়ে ছাত্রাবাস। তিনতলা দালান; লম্বা লম্বা জানালা, দরজা। দূর থেকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছিল। সামনে গিয়ে কাঠের সিঁড়ি দেখতে পেলাম। সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই দেখা মিলল বেকার হোস্টেলের কর্মী শেখ গোলাম গোওসের। আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনতেই বেশ আগ্রহ সহকারে নিয়ে গেলেন আমাদের জাতির পিতার স্মৃতিমাখা ২৩ ও ২৪ নম্বর রুমে।

তিনি বলছিলেন, কলকাতা শহরের বেকার হোস্টেলটি পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম ছাত্রদের জন্য একরকম আশীর্বাদ। এখানে খুবই সামান্য খরচে থেকে-খেয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ রয়েছে। এক নামে বেকার হোস্টেলকে সবাই চেনে। ভারতবর্ষের রাজনীতির অবিস্মরণীয় সব ইতিহাস বেকার হোস্টেলকে সমৃদ্ধ করেছে। সেই বেকার হোস্টেলকে আরও বেশি স্মরণীয় বরণীয় করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আমরা ধীর পদে এগিয়ে চলছি সেই ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেওয়া কক্ষের দিকে। তৃতীয় তলায় ঢুকতেই চোখে পড়ল আমাদের জাতির পিতার জীবন ও কারাজীবন পাথরে খোদাই করে লিপিবদ্ধ করা। আমরা দাঁড়িয়ে সেই সংক্ষিপ্ত ইতিহাস পরে সামনের দিকে এগিয়ে চললাম।  সামনে গিয়ে দেখা মিলল চোখে চশমা, মুজিব কোট পরিহিত শ্বেতপাথরে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর  ভাস্কর্য। ১৯৯৮ সালে তত্কালীন বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বরের সঙ্গে ২৩ নম্বর কক্ষটিকে যুক্ত করে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ গড়ার উদ্যোগ নেন। পরে সেই বছরের ৩১ জুলাই বঙ্গবন্ধু  স্মৃতিকক্ষের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের তত্কালীন উচ্চশিক্ষামন্ত্রী সত্যসাধন চক্রবর্তী।

বঙ্গবন্ধুকে জানার জন্য প্রতিদিনই কেউ না কেউ এখানে আসেন, শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ২৪ নং কক্ষে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর পড়ার চেয়ার-টেবিল, একটি কাঠের আলমারি ও খাট। আমি জাতির পিতার খাটের সামনে গিয়ে কিছু সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম আর  মনে মনে ভাবছিলাম— আবার যদি দেখতে পেতাম আমাদের জাতির পিতা এ কক্ষে এসে হাঁটছেন! 

হঠাত্ মা ধাক্কা দিয়ে বললেন, ‘চল, সামনে এগিয়ে যাই।’

পরে আমরা পাশের কক্ষে গেলাম। এ কক্ষে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর একটি আলোকচিত্র আর বেশকিছু বই-পুস্তক। স্মৃতিকক্ষ দেখতে আসা পর্যটক ও বঙ্গবন্ধুর ভক্তদের বেকার হোস্টেলের কর্মী শেখ গোলাম গোওস সহযোগিতা করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবনের গল্প শোনান। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ২৩ নম্বর রুমে থেকে লেখাপড়া করেছেন। আর ২৪ নম্বর রুমে রাতে ঘুমিয়েছেন।’

আসলে আমি এখানে খুঁজতে এসেছি আমার চেতনার শেকড়। ঘড়ির কাঁটায় সময় এগিয়ে চলছে। এদিকে আমাদের বিদায় নেওয়ার সময় হয়ে এলো। মন না চাইলেও ফিরতে হলো। 

ইত্তেফাক/আরএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন