শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

রায়পুরে মেঘনায় বিলীন বসতঘর-আবাদি জমি

ভাঙনের কবলে শতাধিক স্থাপনা

আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ০৪:১০

‘বর্ষাকাল আসলেই আতঙ্কে থাকি কখন কী হয়। ভাঙনে আমার আবাদি জমি, ফলের বাগান, প্রিয় বাড়িঘর সবকিছু বিলীন হয়ে গেছে। আমিসহ নিঃস্ব হয়েছে বহু মানুষ। এখন আমার আর হারানোর কিছু নাই।’ মেঘনার পাড়ে বসে এভাবেই কথা বলছিলেন মনির দেওয়ার মাঝি (৭৫)। মেঘনার ভাঙনে এখন তিনি নিঃস্ব। বাড়ি, চাষের জমি বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই তার। শুধু তিনি নন, এভাবেই নিঃস্ব হয়েছেন কানিবগারচর গ্রামের রহমান মাঝিসহ নদী পাড়ের শতশত মানুষ। চলতি বর্ষায়ও মেঘনায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে সর্বশেষ গত পনের দিনে ৩৫ বসতঘর বিলীন হয়েছে।

জানা যায়, গত প্রায় ১০ বছর ধরেই লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা কানিবগারচর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনার সংযোগস্থলে ভাঙন দেখা দেয়। গেল বছরগুলোর চেয়ে এবার ভাঙনের তীব্রতা এবার বেশি। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবার।

দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু ছালে মিন্টু ফরাজী বলেন, মন্ত্রী, স্থানীয় এমপি ও সরকারে অনেক কর্মকর্তা সরেজিমনে নদীভাঙনের চিত্র দেখেছেন। কিন্তু ভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা না নেওয়া গত ১০ বছরে প্রায় তিন শতাধিক একর আবাদি জমি ও শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনে কানিবগারচর গ্রাম তলিয়ে গেলে ভূমিহীন হয়ে পড়বে কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষ। বর্তমানে মোল্লার হাট এলাকার পুরান বেড়ির মাথার শতাধিক ঘরবাড়িসহ দোকানপাঠ ভাঙনের কবলে রয়েছে।

সরেজমিনে উপজেলার ৮ নম্বর চরবংশী ইউনিয়নের কানিবগারচর গ্রামে দেখা গেছে, ভাঙনে গত ১০ দিনে প্রায় ছয়-সাত একর আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। এছাড়া মনির দেওয়ান, সাদেল মাঝি, রহমান মাঝি, জোহুরা খাতুন, হানিফ হরকার, মোস্তফা হরকার, রহমান মাঝি, আনোয়ার হাওলাদার ও সহিদ উল্যাসহ ২০টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। বর্তমানে চরম হুমকির মুখে রয়েছে প্রায় ৩০টি বসতঘর। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো কোনো সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা না পাওয়ায় ঝুপড়ি ঘর বা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন দাশ বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া এর আগে নদীতে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ায় বহু পরিবারকে আশ্রয় প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত তাদের খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ইমতিয়াজ বলেন, আমাদের জনবল কম থাকায় সব বিষয় খোঁজখবর নেওয়া সম্ভব হয় না। তবে, মেঘনা নদী ভাঙনরোধে স্থানীয় এমপি সাহেবের ডিও লেটারের মাধ্যমে একটি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন আসলে দ্রুত কাজ করা হবে।

ইত্তেফাক/এএইচপি