রোববার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

যমুনা-তিস্তাসহ চার প্রধান নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে

বন্যা কবলিত এলাকা বাড়ছে, ফসলের ক্ষতি

আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০৮:০০

দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চারটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে অবস্থান করছে। ফলে স্বল্পকালীন বন্যাকবলিত এলাকা  বাড়তে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল বাড়ছে যা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানির সমতল বাড়ছে।  কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার তিস্তা অববাহিকা সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। যমুনা নদী ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ এবং পোড়াবাড়ী পয়েন্টে বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে। বর্তমানে তিস্তার পানি কাউনিয়ায়, যমুনার পানি টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ী, সুরমার পানি সিলেটের কানাইঘাটে ও সোমেশ্বরীর পানি নেত্রকোনার কলমাকান্দায় বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিবেদনে জানান হয়, বিভিন্ন নদনদীতে তাদের পর্যবেক্ষণাধীন ১০৯টি স্টেশনের মধ্যে গতকাল সোমবার পানির সমতল বেড়েছে ৮১টিতে, কমেছে ২৪টিতে। আর অপরিবর্তিত আছে চারটি স্টেশনের পানির সমতল। এদিকে তিস্তা অববাহিকার বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও প্লাবিত হয়ে পড়েছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের চরাঞ্চলগুলো। পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা বন্যার পানি কমলেও দুর্ভোগ বাড়ছে। চরাঞ্চলে চাষ করা বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। রংপুরের গঙ্গাচড়া কাউনিয়া ও পীরগাছার নিম্ন অঞ্চলের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আগাম সবজি ও রোপা আমনের খেতে। হাঁটুপানিতে ডুবে আছে ঘর-বাড়িসহ উঠতি ফসল।

গতকাল দুপুরে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। রংপুরের কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া ও পীরগাছা উপজেলার ৪০টি চরাঞ্চলে ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে। নদী তীরবর্তী এলাকায় বসতভিটা ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও জেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে বাড়ছে বন্যা আতঙ্ক।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে জেলার অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ফুলজোড় ও বড়াল নদনদীর পানিও। পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার শাহজাদপুরসহ বিভিন্ন নিম্ন এলাকায় চারণ ভূমি প্লাবিত হওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। কাঁচা ঘাসের অভাবে দুগ্ধ উৎপাদন কমে গেছে বলে খামারিরা জানান।

এদিকে শাহজাদপুর, চৌহালী ও কাজীপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অনেক রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে। চরাঞ্চলসহ অনেক নিচু বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত এবং ডুবে গেছে বিভিন্ন ফসল। এতে বিশেষ করে চরাঞ্চল এলাকার মানুষের দুঃখ দুর্দশা বাড়ছে। বন্যাকবলিত অনেক পরিবার এখন মানববেতর জীবনযাপন করছে।

গতকাল সোমবার সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে কাজীপুরের মেঘাই পয়েন্টে পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে নদীর নতুন করে পানি বাড়তে থাকায়  বন্যা প্লাবিত জেলার পাঁচটি উপজেলার যমুনা অভ্যন্তরের চরাঞ্চলের গ্রামগুলো, ফসলের মাঠ,বসতবাড়ি পানি উঠছে তাই এলাকাবাসী ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে।

এদিকে সিলেট অফিস জানায়, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। 

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সিলেটে কয়েক দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিতে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সকাল থেকে সিলেটের সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টেও পানি বেড়েছে।

ইত্তেফাক/এমএএম