জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় মোংলায় সুন্দরবনের পাশে এবার নতুন করে সৃষ্টি করা হচ্ছে ‘ম্যানগ্রোভ গ্রাম’। সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলার চিলা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছ বিতরণের মধ্য দিয়ে এ ‘ম্যানগ্রোভ গ্রাম’ সৃষ্টি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার। এ সময় স্থানীয়দের মধ্যে ২ হাজার কেওড়া ও ২ হাজার গোলপাতা গাছের চারা বিতরণ করা হয়। এর আগে এ লক্ষ্যে লবণসহিষ্ণু ১৫ হাজার নারিকেল, কতবেল ও সফেদা গাছ বিতরণ করা হয়েছে। এ সময় ক্লাইমেট অ্যাকশন গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে ম্যানগ্রোভ নার্সারি পরিচর্যার সরঞ্জামাদিও বিতরণ করা হয়।
এই ম্যানগ্রোভ গ্রাম সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির প্রধান আবু সাদাত মনিরুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন চিলা ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আকবর হোসেন, সোনাইলতলা ইউপি চেয়ারম্যান নাজরিনা বেগমসহ অন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, গোলপাতা গৃহনির্মাণ উপকরণ ও গৃহস্থালি আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহূত হয়। গোলপাতা ফলের রস থেকে গুড় তৈরি করা হয়, যা ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। কেওড়ার আচার ও কেওড়ার পানি মুখরোচক খাবার। কেওড়া ফুলের মধুও বেশ উন্নতমানের। এসব পণ্যের বাজারদর ও চাহিদা ব্যাপক। তবে ম্যানগ্রোভ বনের বড় অবদান প্রকৃতিতে। এটি চলমান বৈশ্বিক ইস্যু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সাহায্য করে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বৃদ্ধির ফলে ঘটছে জলবায়ুর পরিবর্তন। আর এই কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণের ক্ষমতা সাধারণ গাছের তুলনায় ম্যানগ্রোভ গাছের ক্ষমতা চার গুণ বেশি। তাই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ম্যানগ্রোভ বনায়নকে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ম্যানগ্রোভ বনায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কাজ করছে ব্র্যাক। এইচএসবিসি ব্যাংক ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে ব্র্যাক চট্টগ্রামের মিরসরাইতে এরই মাঝে গড়ে তুলেছে একটি কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ বন। ব্যক্তি পর্যায়ে ম্যানগ্রোভ বনায়নে সুন্দরবন লাগোয়া এলাকায় আগে থেকেই কাজ করছে সংস্থাটি। পাশাপাশি সুন্দরবনের আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জনপদের মানুষের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আরো নানাভাবে কাজ করছে ব্র্যাক। এর মধ্যে মোংলার মানুষের নিরাপদ পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সংস্থাটি। ডেনমার্ক সরকারের সহায়তায় এই প্রকল্পের আওতায় উপজেলাটির ৬৭ হাজার ৩০০ মানুষের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে ‘বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রযুক্তি’ প্রদানের কাজ চলছে ব্র্যাকের।