বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

বাস সমিতির দ্বন্দ্বে চরম ভোগান্তিতে রাজবাড়ী-ফরিদপুরের যাত্রীরা

আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:২৮

রাজবাড়ী ও ফরিদপুর বাস সমিতির দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এই দ্বন্দ্বের কারণে প্রায়ই রাজবাড়ী-ফরিদপুর রুটে লোকাল বাস ও দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ থাকছে। এতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জাঁতাকলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ বাস যাত্রী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন সংস্থার শিক্ষার্থীরা।

একদিকে বাস শ্রমিকদের মধ্যে হাতাহাতি, তর্ক-বিতর্কসহ অপ্রীতিকর বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে, অন্যদিকে দুই জেলার লোকাল বাসের সরাসরি যোগাযোগ ও দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে।

ছবি: ইত্তেফাক

গত বুধবার (৩০ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) ফরিদপুর-রাজবাড়ী-গোয়ালন্দ সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাজবাড়ী-দৌলতদিয়া-ফরিদপুর রুটে দুই জেলার সবগুলো বাস নিজ নিজ জেলার সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত চলাচল করছে।

বাস শ্রমিক সূত্র জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের বাস শ্রমিকদের মধ্যে হাতাহাতি ও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরে ফরিদপুরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও ফরিদপুরের রাজবাড়ীর রাস্তার মোড় থেকে রাজবাড়ীর মালিকানাধীন বাসগুলো আবার রাজবাড়ীর দিকে ফিরিয়ে দেয় ফরিদপুর বাস মালিকগোষ্ঠী। এর পর পরই রাজবাড়ী থেকেও ফরিদপুরের মালিকানাধীন বাসগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী শহর থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টায় রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। প্রতি ১০ মিনিট পরপর একটি করে বাস ছাড়ে। রাত ৮টা পর্যন্ত এভাবে বাস চলতে থাকে। অপরদিকে ফরিদপুর থেকে দৌলতদিয়ার বাস আসে আধা ঘণ্টা পর পর। ফরিদপুর ও রাজবাড়ী পথে প্রতিদিন অন্তত ৮০ বার বাস চলাচল করে। সকাল ৬টা থেকে বাস চলা শুরু হয় এবং রাত ৮টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। অপরদিকে ফরিদপুর থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া পথে প্রতিদিন ৪২ বার বাস চলাচল করে। গত বুধবার সকাল ৬টা থেকে এই দুই পথে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ থাকায় এই পথে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়েছে।

রাজবাড়ী জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রাজ্জাক লিটন বলেন, রাজবাড়ী-ফরিদপুর যৌথভাবে লোকাল বাস চলাচল করে। ৩ দিন আগে ফরিদপুর থেকে আমাদের এই স্ট্যান্ডের সহকারীকে মারপিট, একটি বাসের প্লাস ভাঙচুর করাসহ বেশ কয়েকটি বাস ফরিদপুর থেকে পাঠিয়ে দেয়। রাজবাড়ী থেকে কোনো বাস আর ফরিদপুর যাবে না বলে জানায়।

রাজবাড়ী জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মুরাদ হাসান বলেন, রাজবাড়ী-ফরিদপুর দুই জেলার মধ্যে পরিবহন চলাচলের মোট সড়কের ৩ ভাগের ২ ভাগ রাজবাড়ীর সীমানায় ও ১ ভাগ ফরিদপুরের। কিন্তু সুযোগ সুবিধা তারই বেশি ভোগ করলেও অবহেলিত রাজবাড়ী। অপর দিকে ফরিদপুর বাস মালিকগোষ্ঠী রাজবাড়ী জেলার ওপর দিয়ে দূরপাল্লার পরিবহন চালালেও তারা প্রায় বন্ধ করে দেয় রাজবাড়ীর পরিবহনগুলো।

ছবি: ইত্তেফাক

রাজবাড়ী জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী থেকে প্রতিদিন খুলনায় ৩টি, বাগেরহাটে ১টি, বরিশালে ২টি, দর্শনায় ২টি ও যশোরে ১টি, বেনাপোলে ১টি সহ জেলায় ১০টি গাড়ি চলাচল করতো। এই দ্বন্দ্বের কারণে রাজবাড়ীর দূরপাল্লার পরিবহনগুলো ফরিদপুর জেলার ওপর দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে ফরিদপুর বাস মালিকগোষ্ঠী।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এদিকে ফরিদপুর থেকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দের দৌলতদিয়ার দিক থেকে আসা বাসগুলো ফরিদপুরের সীমান্তবর্তী সাইন বোর্ড এলাকা পর্যন্ত আসছে। পরে ওই যাত্রীরা পায়ে হেঁটে কিছুটা পথ অতিক্রম করে ফরিদপুরের সীমানায় এসে মাহেন্দ্র কিংবা ইজিবাইকে করে ফরিদপুর আসছেন। এতে একদিকে ভাড়া বেশি লাগার পাশাপাশি এক পরিবহন থেকে অপর গাড়ীতে ওঠার ভোগান্তি। কিছুদিন এ অবস্থা চলছে এই রুটের যাত্রীদের ভোগান্তির সীমা থাকবে না।

গোয়ালন্দ মোড় থেকে ফরিদপুরগামী বাস যাত্রী মো. শাহিদুল ইসলাম মেহেদী বলেন, বাস শ্রমিকের দ্বন্দে সাধারণ যাত্রীদের এই ভোগান্তি এখন ফোড়ার ওপর বিষ ফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাস সরাসরি ফরিদপুর না যাওয়া ভেঙে ভেঙে অতিরিক্ত ভাড়া খরচ হচ্ছে আমাদের। বাসের বিকল্প হিসেবে মাহেন্দ্র গাড়িতে যাতায়াত করতে হয়।

ফরিদপুরের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক তুহিন লস্কর বলেন, দুই জেলার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের বসে গত বুধবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা নিজ নিজ জেলার শেষ সীমানা পর্যন্ত বাস চালাবেন। তবে রাজবাড়ী এ সিদ্ধান্ত মেনে ফরিদপুরের সীমান্ত পর্যন্ত বাস চলাচল গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করলেও ফরিদপুর থেকে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ইত্তেফাক/পিও