বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ফরিদপুর মেডিকেলে মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু, ইন্টার্ন চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনদের মারামারি 

আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৫৬

ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২১ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

মৃত ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের ৩ সদস্যকে পুলিশ হেফাজতে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা গেছে, শহরের কমলাপুর এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা নয়ন খানকে (৯৫) অসুস্থ অবস্থায় সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দোতলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

নয়ন খানের নাতি আলমগীর বিশ্বাস বলেন, রাত ১টার দিকে তার নানার শ্বাসকষ্ট হলে নার্সদের জানাই। তারা ইমার্জেন্সিতে চিকিৎসককে জানাতে বলেন। এরপর ইমার্জেন্সিতে কর্তব্যরত চিকিৎসককে রোগীকে ওয়ার্ডে গিয়ে একটু দেখার জন্য এবং পরে ন্যুনতম একটু অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থাই নেননি। কিছুক্ষণ পর এসে দেখি আমার নানা মারা গেছেন।

আলমগীর বলেন, এ সময় ডাক্তারদের সঙ্গে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আমার মা আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে একটি বাথরুমে আটকে রাখেন। এরপর প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জনের মতো এসে বাথরুম থেকে বের করে আমার ওপর হামলা চালায়।

হামলায় আহতরা হলেন মৃতের নাতি আলমগীর বিশ্বাস (২৮), তৌহিদ বিশ্বাস (২৫), আলিফ খান (১৪) ও হামজা খান (১২), মেয়ে জেসমিন (৪২), সাবিনা ইয়াসমিন (৫০) ও রেবেকা সুলতানা মনি (৩৫) আহত হন। এছাড়া ঘটনার সময় মৃতের পাশে বসে আহাজারি করতে থাকা তার বয়োবৃদ্ধ স্ত্রী হালিমা বেগমকেও (৮৫) ধাক্কা মেরে সিট থেকে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়। এদের মধ্যে ৩ জনকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

অপরদিকে, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই ঘটনায় হাসপাতালের স্টাফসহ তাদের ১৩ জন আহত হয়েছে। আহতদের বিএসএমএমসি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী আহতরা হলো হাসপাতালের স্টাফ অর্ণব (২৬), ইন্টার্ণ ডাক্তার মাহমুদুল (২৬), শামিম (২৪), রোকন (২৪), শিহাব (২৪), এজাজ (২৬), মহিন (২৬), শাকিব (২৬), পাভেল (২৬), ইসতেফার (২৪), জাহিদ (২৬), সাব্বির (২৬) ও ফরহাদ (২৬) আহত হন। তারা সকলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রাবাসে থাকেন।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি এমএ জলিল বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদেরকে প্রথমে থানায় নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিনই কমবেশি ঝামেলা হয়। আমি বর্তমানে ছুটিতে হাসপাতালে বাইরে রয়েছি। তবে গতরাতে একটি মারামারির কথা জানতে পেরেছি। বিস্তারিত জেনে পরবর্তীতে জানানো সম্ভব হবে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার জানান, এই ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে জেলা প্রশাসনের ১ জন সদস্য, জেলা পুলিশের একজন সদস্য ও মেডিকেল কলেজের ১ জন সদস্য থাকবে। এই কমিটি আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান তিনি।

ইত্তেফাক/পিও