টাঙ্গাইলের সখীপুরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দেড় বছরের কার্যাদেশে শুরু হওয়া মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ তিন বছরেও শেষ না করার অভিযোগ উঠেছে। কর্তৃপক্ষ বারবার তাগাদা দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এতে কোনো কর্ণপাত করেনি।
সম্প্রতি ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। লাইসেন্সও বাতিল ও পুনঃদরপত্র আহ্বানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগ কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১০ মে শুরু মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের নভেম্বরে। এর আগে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে দরপত্র বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১২ কোটি ৫৪ লাখ ৪ টাকা ব্যয়ে তিনতলা ভবনের নির্মাণ কাজটি পায় টাঙ্গাইলের ‘কেএসবিএল-আরএসি’ নামের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উপজেলা পর্যায়ে ৩ তলা বিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণ হচ্ছে ৪০ শতাংশ জমির ওপর। মসজিদের নিচতলার আয়তন হবে ১২ হাজার বর্গফুট। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার প্রতিটির আয়তন হবে সাত হাজার ৮০০ বর্গফুট।
কাজটি শুরুর পর মূল ভবনের মাটির নিচের ফাউন্ডেশন ও প্রথম তলার পূর্বাংশের এক অংশের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ওই অংশের সিঁড়ির কাজ আংশিক শেষ করার পর থেকে আর কোনো ঠিকাদারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় ভবনের নির্মাণ কাজ। এমতাবস্থায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভবন নির্মাণে অনিশ্চয়তায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের বাকি অংশে রড বের হয়ে রয়েছে। রডে মরিচা, বিমে শ্যাওলা ও আগাছায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণ-সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় বড় অংকের লোকসান এড়াতে নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখে কাজ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সারোয়ার আলম খান বলেন, কর্তৃপক্ষ সময় মতো টাকা দিতে না পারায় নির্মাণ কাজ যথাসময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে নির্মাণ-সামগ্রীর দাম দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের লোকসান গুণতে হচ্ছে। ফলে বড় অংকের লোকসান এড়াতে নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগ টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ১৮ মাসের কাজে ৩ বার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। মূলত ঠিকাদারদের গাফিলতি ও সক্ষমতার অভাবেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বারবার তাগিদ দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। পুনঃদরপত্র আহ্বানের জন্য নতুন স্টিমেটের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে। বাস্তবায়নের সময়সীমা থাকবে সর্বোচ্চ ৯ মাস। নির্মাণ-সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০২৩ শিডিউলে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন বহুতল ভবন বিশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মাণ করে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত ঠিকাদারের চরম গাফিলতিতে নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে হয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার কথা হয়েছে।
সব সময় খোঁজ-খবর রাখছেন জানিয়ে তিনি বলেন, পুনঃদরপত্রের মাধ্যমে অচিরেই নির্মাণ কাজ শুরু হবে।