সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

তারা রাঁধেন, চুলও বাঁধেন

আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:০৫

কথায় আছে, যারা রাঁধেন তারা চুলও বাঁধেন। নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলছেন এমন অনেক নারী। দাপ্তরিক কাজের বাইরে এসব নারীরা সকাল-বিকাল ছুটে বেড়ান নানা প্রান্তে। কথা বলেন সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে। শোনেন তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা। নিয়মিত খোঁজখবর নেন সমাজের অবহেলিত গরিব-দুঃখী মানুষের। অন্যদিকে বাল্যবিবাহ, চিকিৎসাসেবা, ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ ব্যবস্থা গুরুত্ব সহকারে তদারকি করছেন।

এই নারী কর্মকর্তারা হলেন মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মার্জিয়া সুলতানা, কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিংকি সাহা, রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপমা ফারিসা, ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কানিজ আফরোজ ও রাজৈর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খাদিজা আক্তার। তারা কেবল অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ইউএনও এবং এসিল্যান্ড নন, তারা একজন স্ত্রী, একজন মা, একজন গৃহিণী। 

মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) মার্জিয়া সুলতানা বলেন, অনেকেই মনে করেন, নারী কর্মকর্তা এক ধরনের দুর্বলতা। কিন্তু আমি মনে করি, নারী কর্মকর্তা মানেই একটি ইতিবাচক ও শক্তিশালী শব্দ।

একজন নারী ইউএনও হিসেবে কর্মক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিংকি সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নারীদের ক্ষমতায়নকে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছেন। মাঠপর্যায়ের সব নারী সাহস ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারছে। এক সময় নারী সম্পর্কে মানুষের মনে যে নেতিবাচক ধারণা ছিল, আমার কাছে মনে হয় না এখন সেই ধারণা আছে। তাই কর্মক্ষেত্রে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। পুরুষ আর নারী একে অপরের পরিপূরক। আমরা সমানভাবেই কাজ করছি। জনগণকে সেবা দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে ছকে বাঁধা দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জনগণের মঙ্গল হয়, ভালো হয় সেটাই করার চেষ্টা করছি। তবে এমপি স্যার, জেলা প্রশাসক স্যার এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষের ঐকান্তিক সহযোগিতায় প্রতিটি কাজ করা সহজ হয়েছে বলে আশা করি। 

ইউএনও হিসেবে নারীর ক্ষমতায়নে কীভাবে কাজ করছেন এ প্রসঙ্গে রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপমা ফারিসা বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। একজন নারী হিসেবে নারীর সমস্যা সরাসরি জানার সুযোগ থাকায় কর্ম পরিকল্পনা করাও সহজ হচ্ছে। মাত্র কয়েক দিনে একাধিক মা সমাবেশ, উঠোন বৈঠক এবং মহিলা বিষয়ক কর্মশালা করেছি। আমি একজন নারী হয়ে পেরেছি। অন্যরাও পারবে। স্বপ্ন দেখতে হবে। নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিত্ববান হলে কোনো সমস্যা হয় না। ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ বিভিন্ন কাজ করতে কোনো সমস্যা হয় না। অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়।

এছাড়াও রাজৈর উপজেলার এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের ইউএনও স্যার যোগদানের পর থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারী প্রতি তার সদচারণে ভক্ত। তিনি একজন ভদ্র, সৎ সেইসঙ্গে একজন মেধাবী কর্মকর্তাও। সেবা নিতে আসা অনেককেই তার বিষয়ে প্রশংসা করতে শুনেছি।

ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কানিজ আফরোজ বলেন, এটা নিশ্চই আমাদের জন্য সৌভাগ্য। অসহায় নারীরা যখন বিশ্বাস নিয়ে আমাদের কাছে আসেন, আমাদেরকে আপন মনে করে তাদের সব সমস্যার কথা অকপটে খুলে বলেন এবং ভরসা করেন ন্যায়বিচার পাওয়ার, তখন একজন নারী কর্মকর্তা হিসেবে প্রশান্তি পাই এবং সকল পরিশ্রম সার্থক বলে মনে হয়।

রাজৈর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খাদিজা আক্তার বলেন, নারী হওয়ার কারণে অসহায় নারীদের সমস্যার সহজ সমাধান দেওয়া যায়। যৌতুক, নারী নির্যাতন, বাল্যবিয়ে বন্ধ করার পাশাপাশি নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে টেকসই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যায়।

ইত্তেফাক/পিও