বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

‘আল্লায় আমার মরণ দেয় না কেন?’

জমি লিখে নেওয়ার পর বৃদ্ধ মাকে মারধরের অভিযোগ

আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:৩৬

কৌশলে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর বৃদ্ধ মাকে রাখা হয়েছে ছাগল রাখার ঘরে। ঠিকমতো খাওয়া তো জোটেই না, উলটো মলমূত্রে শরীর মেখে একাকার। কান্না করলে মারধরও করা হয়। বৃদ্ধ মা রহিতন বেগম ওরফে রহিমার (৮০) বাড়ি ঘিওর উপজেলার ভাটরাকান্দি গ্রামে। তার দুই মেয়ে বেদানা বেগম (৪০) ও আংগুরি বেগমের (৩৮) বিরুদ্ধে উঠেছে এমন অভিযোগ। দুই মেয়ের কবল থেকে বৃদ্ধ মাকে উদ্ধার ও সুচিকিৎসার জন্য গত সোমবার ঘিওর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ঐ বৃদ্ধের বড় মেয়ে মমতাজ বেগম।

এমন অভিযোগের ভিত্তিতে একই দিন সরেজমিনে স্থানীয় কয়েক জন সংবাদকর্মী ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর চড়াও হন দুই মেয়ে বেদানা বেগম ও আংগুরি বেগম, তাদের স্বামী ও সন্তানেরা। 

মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমরা তিন বোন ও দুই ভাই। বোন বেদেনা ও তার স্বামী রেজাউল করিম, অপর বোন আংগুরি ও তার স্বামী আনিছুর রহমান চক্রান্ত করে বৃদ্ধ মাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কয়েক দাগে তার নামের সর্বমোট ৯৭.১৩ শতাংশ জমি ২০২১ সালে নিজেদের নামে লিখে নেয়। তার পর থেকেই মায়ের ওপর তারা নির্যাতন করতে থাকে। ছাগলের ঘরে তাকে রাখছে। মাকে আমার কাছে নিতে চাইলে তারা বাধা দেয়।’

বৃদ্ধের ছোট ছেলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘টয়লেট করবে বলে মাকে খাবার দেওয়া হয় না। আমরা খাবার দিতে গেলে কিংবা মাকে আমাদের কাছে আনতে গেলে দুই বোন ঝগড়া করে, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।’ বয়সের ভারে ন্যুব্জ আর নানা রোগে আক্রান্ত বৃদ্ধ মা ছোটখাটো কথা ছাড়া  তেমন কথা বলতে পারেন না। শুধু চোখের পানি ছেড়ে বললেন, ‘আল্লায় আমার মরণ দেয় না কেন?’ প্রতিবেশী সামেলা বেগম বলেন, বৃদ্ধা ক্ষুধায় কাতরালেও খাবার না দিয়ে উলটো বকাঝকা ও মারধর করেন মেয়ে আংগুরি বেগম ও তার স্বামী রেজাউল করিম। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে বিচার হলেও মেয়েদের মনোভাবের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, ভাটরাকান্দি গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের মৃত্যু হয় প্রায় ৪০ বছর আগে। তিনি মৃত্যুর আগে রহিমার নামে প্রায় ১৬৫ শতক জমি লিখে দেন। তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিন মেয়ে ও দুই ছেলে রেখে মারা যান। বড় ছেলে মো. বিল্লাল হোসেন, মেজো বোন মমতাজ বেগম, তৃতীয় মেয়ে বেদানা বেগম, চতুর্থ ছেলে দেলোয়ার হোসেন ও পঞ্চম মেয়ে আংগুরি বেগম। বৃদ্ধাকে ভরণপোষণ দেওয়ার আশ্বাসে তাকে নিজেদের কাছে রাখেন তার দুই মেয়ে বেদানা ও আংগুরি বেগম। 

বৃদ্ধার বড় পুত্রবধূ রেখা বেগম বলেন, ‘টয়লেট করবে বলে শাশুড়িকে ঠিকমতো খাবার দেওয়া হয় না। শাশুড়িকে আমাদের কাছে আসতে দেওয়া হয় না। খাবার দিতে গেলে দুই ননদ খাবার ফেলে দেন।’ বেদানা বেগম ও আংগুরি বেগম জানান, ‘আমরা সাধ্যমতো মায়ের সেবা করি। উনি অসুস্থ, বিছানায় পায়খানা প্রস্রাব করেন। তাই আলাদা ঘরে রাখা হয়েছে। জমি লিখে নেওয়ার কথা প্রসঙ্গে তারা বলেন, ‘আমাদের দুই বোনকে ভালোবেসে মা জমি লিখে দিয়েছেন।’ 

ঘিওর থানার ওসি মো. আমিনুর রহমান জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/এমএএম