রোববার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

উত্তরের অধিকাংশ লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত

আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:২০

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনের লালমনিরহাট বিভাগের অধীনে দেশের উত্তরের প্রশাসনিক বিভাগের আট জেলার লেভেল ক্রসিংগুলো এখন যানবাহন ও পথচারী পারাপারের ক্ষেত্রে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ১০৭টি অবৈধ লেভেলক্রসিংসহ ২০০টি অরক্ষিত অবস্থায় মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এসব লেভেল ক্রসিংয়ে যানবাহন ও পথযাত্রী পরাপার হতে গিয়ে এক বছরে দুর্ঘটনায় ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের দুজন কর্মকর্তা জানান, ১৯০০ সালের শুরুতে দেশে রেল যোগাযোগ চালুর সময় থেকেই রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের মধ্যে ৩৯১টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এরপর আরো ১০৭টি লেভেল ক্রসিং স্থাপন করা হলেও তা রেলওয়েকে জানানো হয়নি। কালের বিবর্তনে স্থানীয়দের চাহিদা, স্থানীয় প্রশাসনের প্রশাসনিক কাঠামোর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ নানা কারণে ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় প্রশাসন যখন যার প্রয়োজন, তারা নিজের মতো করে রেলপথ অতিক্রম করতে সড়ক স্থাপন বা সড়ক সংযোগ করার সময় অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং নিয়ে ভাবেনি। এখন যানবাহন ও পথচারী পারাপার বেড়ে যাওয়ায় এসব এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। লেভেল ক্রসিং দিয়ে যানবাহন ও পথযাত্রী পরাপার করতে গিয়ে এক বছরে ৫৬ জনের মৃত্যু এবং আহত ৩০ জনের মধ্যে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে।

তারা আরো জানান, রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল লালমনিরহাট বিভাগের অধীনে ৪৯২টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে রেলওয়ে ট্রাফিক অ্যান্ড সিগন্যালের ১১৬ ও রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের রয়েছে ৩৭৬টি। এগুলোর অধিকাংশই অরক্ষিত এবং অবৈধ। ঐসব লেভেল ক্রসিংয়ের কোথাও কোথাও সাবধান সাইনবোর্ড লাগিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এ অঞ্চলের নগরীর পাটবাড়ী, বালাটারি, কলাবাড়ী, পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী উপাশু, কাউনিয়া উপজেলার থানা লেভেল ক্রসিং, তকিপল হাট রেলগেট, খোর্দ্দ বালাপাড়া লেভেল ক্রসিং, খোপাতী ও তপসীডাঙ্গা লেভেলক্রসিং, পাঞ্জরভাঙ্গা লেভেল ক্রসিং, শহীদবাগ লেভেল ক্রসিং, বুদ্ধির বাজার বাঁধের রাস্তা লেভেল ক্রসিং, মহেশা রেলঘুণ্টি, মৌল লেভেল ক্রসিং, বলস্নভবিষু লেভেল ক্রসিং, সাধু স্কুল মোড়, বিজলেরঘণ্টি, কলাবাড়ি, পীরগাছার কুটিরপাড়, অন্নানগরসহ রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলার বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত রয়েছে।

কাউনিয়া রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার হোসেন মোবারক জানান, তকিপল বাজার রেলগেটে একজন গেটম্যান রয়েছেন। ঐ গেটম্যান সকাল-সন্ধ্যা ১২ ঘণ্টা ডিউটি করেন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত রেলগেটটি অরক্ষিত থাকে। তিনি আরো জানান, দেশের প্রতিটি রেলগেট নিয়ন্ত্রণ করে রেলের দুটি শাথা, একটি হচ্ছে ট্রাফিক শাখা আরেকটি হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা। গেটম্যান দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। তারপরেও চেষ্টা চলছে।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল লালমনিরহাটের বিভাগীয় প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, অপরিকল্পিতভাবে রেল বিভাগকে না জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসনগুলো যখন যার প্রয়োজন তারা তাদের মতো রেলপথ অতিক্রম করে সড়ক সংযোগ স্থাপন করেছে। কিন্তু এসব লেভেলক্রসিং এখন উত্কণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোতেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও আহতর ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে রেল বিভাগের সমন্বয়হীনতা, জনবলসংকট, অপরিকল্পিত লেভেলক্রসিং স্থাপন এবং পথনির্দেশনা না মানার প্রবণতার কারণে প্রতি মাসেই লেভেল ক্রসিংগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটছে বলে তিনি মনে করেন। তবে তাদের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ জরিপ করা হচ্ছে কতগুলো লেভেলক্রসিং আছে এবং এর মধ্যে কতটি বৈধ, আর কতটি অবৈধ তা চিহ্নিত করা হবে।

ইত্তেফাক/এএইচপি