শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৮ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে বগুড়ায় নেওয়ার পথে মারা গেল ৪ হরিণ

আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮:১২

বগুড়ায় দেশের বৃহৎ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) অভয়ারণ্য বা চিড়িয়াখানার জন্য ক্রয় করা ৪টি হরিণ রাস্তায় মারা গেছে। ৫টি হরিণ জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে ক্রয় করে বগুড়ায় আনার পরে চারটি মারা যায়। একটি বেঁচে থাকলেও তার অবস্থাও ভালো নয়। এই মৃত্যুর জন্য অ্যানেসথেসিয়ার (অবেদন) প্রভাবকে দায়ী করছে টিএমএসএসের পশু অভয়ারন্যের কর্তৃপক্ষ। 

জানা গেছে, বগুড়ার নওদাপাড়ায় টিএমএসএস তাদের বিনোদন পার্কে একটি বেসরকারি অভয়ারণ্য বা চিড়িয়াখানা গড়ে তুলেছে। সেখানে ৯০ শতক জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে হরিণ প্রতিপালন বিভাগ। চলতি বছরে হরিণ প্রতিপালনের জন্য লাইসেন্স পায় সংস্থাটি। লাইসেন্স পাওয়ার পর তারা এখন পর্যন্ত জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে দুই চালানে ১১টি হরিণ ক্রয় করেন। প্রতিটি হরিণের মূল্য ধরা হয় ৫০ হাজার টাকা। এর আগে গত মে মাসে ৫টি হরিণ ক্রয় করে আনার সময় ৩টি মারা যায়। এবার ৫টির মধ্যে মারা গেছে ৪টি। 

টিএমএসএস পশু অভয়ারণ্যের নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাকিম শাহ জানান, রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে ৫টি হরিণকে অ্যানেসথেসিয়া করে খাঁচায় তোলা হয়। পরে খাঁচাসহ ট্রাকটি বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পথে সাভারে থাকতেই একটি হরিণ মারা যায়। আর রাত আড়াইটার দিকে আমরা যখন খাঁচা নামাই, তখন মোট চারটি হরিণকে মৃত পাই। একটি সুস্থ আছে।

নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, এর মধ্যে গত ২৮ মে জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে ৬ টি হরিণ ক্রয় করা হয়। কিন্তু হরিণ হস্তান্তরের সময় অ্যানেসথেসিয়া করার সময় তাদের হাতেই দুটি হরিণ মারা যায়। পরিবহণের সময় আরও একটি। ওই দুইটার পরিবর্তে ২৬ জুন আমাদের আরও দুটি হরিণ দিয়ে পাঠায় জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। আমাদের কাছে আনার পর একটি হরিণ বাচ্চা প্রসব করেছে। এ নিয়ে এখন মোট সাতটি হরিণ রয়েছে টিএমএসএস চিড়িয়াখানায়। 

এভাবে দুই দফায় হরিণ মৃত্যুর কারণে জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে দুষছে টিএমএসএস। এ বিষয়ে মোস্তাকিম শাহী বলেন, তাদের কাছে থেকে হরিণ নেওয়া হচ্ছে। অথচ তারা কোনো গাইড লাইন বা পরামর্শ কিছুই দেয়নি। হরিণ অত্যন্ত সেনসিটিভ (সংবেদনশীল) প্রাণি। কিন্তু তাকে অ্যানেসথেসিয়া করছেন তারা, সেটার প্রয়োগমাত্রা ঠিক আছে কিনা কিছুই আমরা জানি না। কিন্তু আমরা দেখেছি নিয়ে আসার পর হরিণগুলো খুবই দুর্বল থাকে। এ জন্য মনে হয় অ্যানেসথেসিয়ার মাত্রা বা এই কাজের ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি আছে। 

টিএমএসএস পশু অভয়ারণ্যের নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাকিম শাহ সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টায় জানান, ইতিমধ্যে আমাদের চিঠির প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর থেকে মারা যাওয়া ৪টি হরিণের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তার রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি।  

হরিণের মৃত্যুর খবর পেয়ে সেখানে যান বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, খবর পেয়ে সদর উপজেলার একটি টিম গিয়েছিল। বণ্যপ্রাণি মারা গেলে আমাদের তার একটি রেকর্ড রাখতে হয়। হরিণের মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, দেখা যায় হরিণ ভয় পেলে, তাকে ধরতে গেলে হার্ট অ্যাটাক করে। এই প্রাণিটি খুবই নাজুক। আর পরিবহণের সময় তো ঝাঁকুনি লাগেই, লাফালাফি করেছে। এসব থেকে মারা গিয়ে থাকতে পারে।
 
জাতীয় চিড়িয়াখানার ভেটেনারি সার্জন ডা.নাজমুল হুদা বলেন, হরিণ একটি সংবেদনশীল প্রাণি। গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় আঘাত বা ভয়জনিত কারণে হরিণ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। চিত্রা হরিণ অনেক সেনসেটিভ (সংবেদনশীল)। এদেরকে অতিরিক্ত কোনো অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয় না। গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় এগুলো যদি লাফালাফি করে এবং মাথায় আঘাত পায় তাহলে এগুলো মারা যায়। 

ইত্তেফাক/পিও