শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৭ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ছাত্রলীগে গৃহবিবাদ

  • সর্বশেষ ছাত্রসমাবেশে বক্তৃতা দিতে না দেওয়ায়
  • ক্ষুব্ধ ঢাবি ও ঢাকা মহানগর ইউনিট নেতারা
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:০০

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কমিটি গঠন হয় গত বছর ২০ ডিসেম্বর। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মধ্যে নানা বিষয় ও ঘটনাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব-বিবাদ শুরু হয়। নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ধরে রাখার চেষ্টা করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা স্বতন্ত্র ইউনিট হিসেবে কার্যক্রম চালাতে চাইলেও সেখানে নানাভাবে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করছে। বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন স্বয়ং ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রের নেতাকর্মীরা।

সর্বশেষ গত ১ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে বক্তৃতা না দিতে দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মধ্যে চলতে থাকা স্নায়ুযুদ্ধ এখন প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও ঢাকা মহানগর ইউনিটের কাউকেই বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এটাকে তারা নিজেদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে মনে করছেন। সমাবেশ শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। 

গত ৯ মাসে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢাবি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। বছরের শুরুতেই বঙ্গমাতা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের শোভাযাত্রার শাড়ি দিতে আপত্তি জানায়, কেন্দ্রীয় নেতার অনুসারীরা। পরবর্তী সময়ে তারা শাড়ি ছাড়াই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। এর পর ফেব্রুয়ারিতে মারামারি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে ঢাবি ছাত্রলীগের ১৫ নেতাকর্মী বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। যেখানে অধিকাংশই সৈকতের অনুসারী। সৈকতের অনুসারীরা বলেন, কোনো কিছুতে জড়িত না থাকার পরেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এরপর জুলাই মাসে রোকেয়া হলে সৈকতের এক অনুসারীকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত রুম দখল নিয়ে হলগুলোতে ঝামেলা চলছেই।

গত ১৩ জুলাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ছাত্রলীগের রেওয়াজ অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের অনুসারীদের কেন্দ্রে পদায়ন করে থাকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু এবার কোনো আলোচনা ছাড়াই নিজেদের খেয়াল খুশিমতো কেন্দ্রে পদায়ন করা হয়েছে। এটাকে রাজনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থী বলে মনে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট নয় স্বয়ং কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের একটি অংশ। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অনেক নেতা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। তাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ রীতি রেওয়াজের তোয়াক্কা করছে না। ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক নিজেদের সর্বেসর্বা মনে করেন। তারা কমিটিতে অনেক জুনিয়র কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেছেন। ত্যাগী ও সিনিয়র কর্মীদের প্রাপ্ত সম্মান দেননি বলেও তারা অভিযোগ করেন।

এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, সমাবেশ সফল করতে আমরা রাত-দিন কাজ করেছি। কিন্তু আমাদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, কেন আমাদের এড়িয়ে চলা হচ্ছে আমরা জানি না। প্রধানমন্ত্রীর সামনে বক্তব্য দেওয়া আমার অধিকার। কিন্তু আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ বলেন, এত বড় একটি সমাবেশ সুন্দরভাবে সফল করলাম, কিন্তু এত দিনে একটি ফোন দিয়েও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করল না। এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে ফোনে পাওয়া যায়নি। খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।

ইত্তেফাক/এমএএম