বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাসচিব হিসাবে আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন ১১ বছর ১১ মাস ১১ দিন হয়ে গেছে বাংলাদেশ গেমস হয়নি। খেলাধুলা করা একটা দেশ। যদি খেলাই না থাকে তার থাকেটা কি—বলছিলেন সৈয়দ শাহেদ রেজা। পরিকল্পনা করলেন যেভাবেই হোক বাংলাদেশ গেমস চালু করতে হবে। টাকা লাগবে। সৈয়দ শাহেদ রেজা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করলেন। পরিকল্পনার কথা জানালেন। সব শুনে প্রধানমন্ত্রী সন্তুষ্ট হলেন। আন্তর্জাতিক গেমসগুলোর উদ্বোধন এবং সমাপনী যেভাবে হয় ঠিক সেভাবেই হবে বাংলাদেশ গেমস।
সব পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ঘোষণা দিলেন বন্ধ থাকা বাংলাদেশ গেমস হবে। সারা দেশের ক্রীড়াঙ্গনে সাড়া পড়ল। জেলা বিভাগগুলো জেগে উঠল। নতুন জাগরণ তৈরি হলো খেলার মাঠে। গেমসটা শেষ করেই নতুন পরিকল্পনায় ঝাঁপালেন শাহেদ রেজা। খেলোয়াড় খুঁজে আনতে হবে। বাংলাদেশ গেমস হলেই হবে না। খেলোয়াড় আনতে হবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা নারী-পুরুষ খেলোয়াড়দের তুলে আনতে হবে মূল মঞ্চে। খেলার কেন্দ্রীয় মঞ্চে। মাথায় আইডিয়া ঢুকল যুব গেমস করতে পারলে তরুণ খেলোয়াড় প্রতিভাবান খেলোয়াড় পাওয়া যাবে। টাকার কথা ভাবেননি। আয়োজনের পরিকল্পনা করেই এগিয়ে গেলেন। দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে সবার সহযোগিতা চাইলেন। ব্যাপক সাড়া পড়ল যুব গেমসে।
পরিকল্পনা করলেন একবার যুব গেমস একবার বাংলাদেশ গেমস হবে যুব গেমসের খেলোয়াড়রা বাংলাদেশ গেমসের মঞ্চে দাঁড়ায়। অথচ এমন আয়োজন করতে গিয়ে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছিলেন মহসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা। বিরোধী দলের হারতালের মুখে আটকে যেতে বসে ছিল গেমস। বললেন,‘আমি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে হরতাল উইথড্র করতে বলেছিলাম। হয়নি। এর মধ্যেই আমাকে খেলা চালাতে হয়েছিল। একটা খেলা চালু হয়ে গেছে আমি কি করে সেটা বন্ধ রাখব।’ কোভিডের কারণেও আমাকে কঠিন চ্যালেঞ্জর মধ্যে পড়তে হয়েছে। কোভিড চলছে। গেমস আয়োজন করলে খেলোয়াড়রা ক্ষতির মুখে পড়বে। সেটাও ছিল আমার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই চেয়ারে বসে আমি যতগুলো বড় বড় খেলার আয়োজন করেছি সবকয়টার জন্য কঠিন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলাম। একটা দুর্ঘটনা ঘটলে সবাই আমেকেই ধরত। খেলার স্বার্থে খেলা আয়োজন করেছিলাম।’
আপনারা সাংবাদিকরা এসেই বলেন অলিম্পিক গেমস, এশিয়ান গেমসে পদকের সম্ভাবনা কি ? আপনি আমার চেয়ারে বসেন। আমি আপনার চেয়ারে বসে একই প্রশ্ন করি ? দেখি আপনি কি উত্তর দেন। অলিম্পিক গেমস থেকে কয়টা পদক এনে দেবেন।’ শাহেদ রেজা বলছেন, ‘এখন আগের চেয়ে খেলা এখন অনেক বেশি বেড়েছে। এশিয়ান গেমসে আগামীতে পদক আসবে। আমরা সেভাবেই আগাচ্ছি। আমরা যতদূর এগিয়েছি বিশ্বের খেলাধুলা অনেক বেশি এগিয়েছে। এখানে পরিকল্পনা করতে হবে। চাইলেই পড়খ চলে আসবে না। ম্যানচেষ্টার কমনওয়েলথ গেমসে শ্যুটিংয়ে আসিফ হোসেন স্বর্ণ পদক জয় করল। ভারতের অভিনব বিন্দ্রায় রৌপ্য জয় করল। সেই অভিনব বিন্দ্রা পরে অলিম্পিকে স্বর্ণ জয় করল। কেন, কীভাবে হলো। আমাদেরকে সেই পথে চলতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘শর্ট টার্মস পরিকল্পনা করলে হবে না। লংটার্ম করতে হবে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসতে হবে। আমরা সব সময় বলে আসছি একটা ক্যালেন্ডার করতে হবে।’
এখন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসী খেলোয়াড়রা প্রাধান্য পাচ্ছে। শাহেদ রেজা বললেন, ‘এটা শুধু আমাদের দেশেই হচ্ছে না। সব দেশেই হচ্ছে। ভারতে দেখুন, শ্রীলঙ্কাতেও হচ্ছে। আমরা শুরু করেছি কারন আমাদের খেলোয়াড় ঐ লেভেলে নেই। বক্সিংয়ে জিন্নাত এসেছে অ্যাথলেটিকসে ইমরানুর রহমান এসেছে। অনেকেই আছে। অ্যাথলেটিকসে আসছে। বক্সিংয়ে আরও আসছে। ইউরোপে আছে, অস্ট্রেলিয়া থেকে আসছে আমেরিকা থেকেও আসছে। আমরা তো সবাইকে নিতে পারব না। যাচাই বাছাই করব। আমরা বায়োডাটা দেখছি। যখনই গেমস হবে তখন কাজটা শুরু হবে। আমি আশাবাদী।’ সারা বছর দেশি ক্রীড়াবিদরা অনুশীলন করবে আর বিদেশে আন্তর্জাতিক খেলায় প্রবাসী চলে যায় । শাহেদ রেজা বললেন, ‘এরা বললে তো হবে না। কয়টা খেলোয়াড় বিদেশে গেছে। ১৪ বছর ধরে দেশের দ্রুততম মানবী হচ্ছেন একজন। অথচ সাফ গেমসে রেজাল্ট নেই। যারা বিদেশে থাকে তারা দেশে আসে। বাংলাদেশি পাসপোর্ট আছে। ইমরানুর সেনাবাহিনীতে চাকরি পেয়েছেন। স্বর্ণ পদক নেই।’
এশিয়ান গেমস শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশের লক্ষ্য এস এ গেমস। পাকিস্তানে রাজনৈতিক জটিলতায় অনিশ্চয়তা এস এ গেমস। সমাধান হয়ে গেলে প্রস্তুতি শুরু হবে। দেশে অবকাঠামো সংকট রয়েছে। শাহেদ রেজা বললেন, ‘একটা ভেন্যুতে চারটা ডিসিপ্লিন অনুশীলন করে। এনএসসির জিমনেসিয়ামেরও একই অবস্থা। অ্যাথলেটিকস, সুইমিংয়ে এখনো হ্যান্ড টাইমিং। এগুলো ডেভেলপ করতে খুব বেশি অর্থ খরচ হয় তা কিন্তু না। খেলোয়াড়দের সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। দেশি কোচদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’ স্বাধীনতার ৫০ বছর। এখনো পদকের সংখ্যা তলানিতে। শাহেদ রেজা বললেন, ‘মন্ত্রণালয়কে কিংবা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে বিভিন্ন ফেডারেশনের সঙ্গে বসতে হবে। দেখতে হবে কোন কোন খেলায় পদক বেশি আছে। কাদেরকে সহযোগিতা দিতে হবে। ক্রিকেটকে হয়তো দিতে হবে না, ফুটবলকে কিছু দিতে হবে, হকিকে কিছু দিতে হবে। ছোট ছোট ফেডারেশনগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। যেখানে পদকের সম্ভাবনা অনেক বেশি। পরিকল্পনা করলে আগের তুলনায় আগামী পাঁচ বছরে পদকের সংখ্যা বাড়বে।’ ধাক্কাটা কে দেবে, ‘পৃথিবীর কোথায় অলিম্পিক ট্রেনিংয়ের দায়িত্ব নেয় না। সেটা ফেডারেশন করে। এখানে আমরা করছি। লোকাল ট্রেনিং থেকে শুরু করে বিদেশে পাঠাচ্ছি।’