মাদারীপুরে দলিল জাল করে অর্পিত সম্পত্তির আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই চেষ্টার অংশ হিসেবে জেলা জজ আদালতে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলার আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর পৌর এলাকাধীন ১১৩ নং তরমুগরিয়া মৌজার XII-VP-৭৩২(ক)//৬৮-৬৯ নং লীজকেসের এসএ ১১৫ নং খতিয়ানের ১৪৪ নং দাগের ১০ শতাংশ জমির বর্তমান লীজি হোসনে আরা ও শিরিন ইসলাম, পিতা মো. আমিনউদ্দিন বাংলা ১৩৭২ হতে ১৪৩০ সন পর্যন্ত লীজমানি পরিশোধ করে ভোগ দখলে আছেন। এই জমির মালিকানা নিজের দাবি করে আবদুল মান্নান খান, পিতা চান মিয়া সরকারকে বিবাদী করে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনাল আদালতে ১৫৪৪/২০১২ নং মামলা দায়ের করে। সে মামলার আবদুল মান্নান রায় পেলে সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসন উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে ১১/২০২১ নং আপিল মামলা দায়ের করলে আদালত ২ দিনের তামাদি উল্লেখ করে আদালতের অর্পিত সম্পত্তি ট্রাব্যুনালের রায় বহাল রাখে। যদিও জেলা প্রশাসনের দাবি তারা নির্দিষ্ট সময়েই এই আপিল মামলা দায়ের করেছে।
সূত্র মতে, মাদারীপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ২৮-৯-২০২২ তারিখের পত্রে ১৯৬৩ সালের ৯৯৯ নং দলিলের সূচিতে দলিল দাতার নাম বনু বিবি, স্বামী দলিল উদ্দিন ঢালী, ঘুঙ্গিয়াকুল, কালকিনি এবং গ্রহীতার নাম বনা বিবি, স্বামী আবুল হাসেম ঢালী, ঘুঙ্গিয়াকুল, কালকিনি উল্লেখ করা আছে। সম্পত্তির তফসিল অনুযায়ী মৌজা পূর্ব টুবিয়া, দাগ ৪২৮, জমির পরিমাণ ২০ শতাংশ। দাতা বনু বিবির টিপসহি নং ১২২০, যা ১৯৬৩ সালের ৪ নং বহির ৬ নং পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ। অপরদিকে একই অফিসের ০৬-১-২০২২ তারিখের পত্র অনুযায়ী জমির দাতা জগবন্ধু দেবনাথ, পিতা মহিম চন্দ্র দেবনাথ, সাং তরমুগরিয়া, মাদারীপুর সদর এবং গ্রহীতার নাম আবদুল মান্নান খান দেখানো হয়েছে, যার দলিল নাম্বার ৯৯৯, বালাম-১১, বই-১ ও পৃষ্ঠা ১৯৪-২৯৫।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুরের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মো. তুহিন হোসেন জানান এই বিষয়ে মাদারীপুর যুগ্ম জেলা জজ আদালতে রেজিস্ট্রিকৃত ৯৯৯ নং সাফ কবলা দলিল জাল মর্মে ঘোষণামূলক প্রতিকারের জন্য ৮১/২০২৩ নং মামলা চলমান আছে। তাছাড়া অবমুক্তির জন্য আবেদনকারীর নিকট জেলা প্রশাসন থেকে একাধিকবার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হলেও তিনি তা দাখিল করেননি। জেলা প্রশাসনের ওপর অহেতুক চাপ তৈরির উদ্দেশ্যে এই মামলার আবেদন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বর্তমানে অর্পিত সম্পত্তিতে দখলে থাকা লীজি মো. সিরাজুল ইসলাম মামুন জানান, আমি দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে এই সম্পত্তি লীজ দিয়ে খাজনা পরিশোধ করে বসবাস করছি। হঠাৎ করে কয়েকজন এসে এই কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ভুয়া কাগজ তৈরি করে জমির মালিকানা দাবি করেছে। এলাকাবাসী সবাই জানে এই সম্পত্তি সরকারি।
এদিকে আদালত অবমাননার মামলা দায়েরকারী এমডি জাহিদ খান উৎসের সঙ্গে যোগযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আদালত অবমাননার মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান জানান, মাদারীপুর জেলা প্রশাসন সবসময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের আদালতের আদেশ অমান্য করার সুযোগ নেই। আবার একই সঙ্গে সরকারি সম্পত্তি দেখভাল করা ও সরকারি স্বার্থ রক্ষা করার ক্ষেত্রেও আমরা আপোষহীন। দেওয়ানি আদালতে অন্য একটি মামলা চলমান থাকায় এবং একই সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দুইটি ভিন্ন প্রতিবেদন পাওয়ায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হবে।