গোপালঞ্জের কোটালীপাড়ায় বাঁশের বেড়া দিয়ে অর্ধশত পরিবারের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে এলাকার এক প্রভাশালী ব্যক্তি। এই বাঁশের বেড়া দেওয়ার কারণে একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ প্রায় অর্ধশত পরিবারের সদস্যরা ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্দিদশা থেকে মুক্তির জন্য এসব পরিবার প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের নারিকেল বাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
এর আগে পাঁচ বছর আগে রাধাগঞ্জ-পিড়ারবাড়ি সড়কের ২ নং ব্রিজের পূর্ব পাশ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. অনিল দত্তের বাড়ি পর্যন্ত রাধাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) পক্ষ থেকে মাটি দ্বারা একটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে এই রাস্তাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে এইচবিবি (ইটের রাস্তা) করা হয়েছে।
এই রাস্তা দিয়ে নারিকেল বাড়ি গ্রামের দত্তবাড়ি, মহুরী বাড়ি, হালদার বাড়ির প্রায় অর্ধশত পরিবারের লোকজন যাতায়াত করতো।
ঘটনার দিন সকালে নারিকেলবাড়ি গ্রামের মৃত সুনীল ঘরজার ছেলে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি মোশী বাবুল ঘরজা লোকজন নিয়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে অর্ধশত পরিবারের যাতায়াতের এই রাস্তা বন্ধ করে দেয়।
রাধাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান অমৃত হালদার বলেন, ‘রাস্তাটি পাঁচ বছর আগে আমি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় প্রথমে পরিষদের পক্ষ থেকে মাটি দ্বারা নির্মাণ করে দিয়ে ছিলাম। পরবর্তীতে এলজিইডি থেকে এই মাটির রাস্তাটি ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়। এই রাস্তার যখন কাজ চলে তখন মোশী বাবুল ঘরজা কোন প্রকার বাঁধা প্রদান করেনি। এখন তিনি রাস্তাটির কিছু অংশের জায়গা নিজের দাবি করে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দিয়েছে। তার এই কাজটি কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।’
নারিকেলবাড়ি গ্রামের ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, ‘সরকারি জায়গার ওপর দিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তাটি দিয়ে আমরা এলাকার অর্ধশত পরিবারের লোকজন যাতায়াত করি। রাস্তাটিতে বেড়া দেওয়ার কারণে আমরা এখন ঘরবন্দী হয়ে পড়েছি। আমরা এই বন্দিদশা থেকে মুক্তির জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাই।’
একই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. অনিল দত্ত আক্ষেপ করে বলেন, ‘জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে এই দেশকে স্বাধীন করেছি। স্বাধীনতার পরে ৪০ বছর চিকিৎসা পেশায় থেকে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে ছিলাম। বরিশালের সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের পরিচালকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেছি। অনেক মানুষের উপকার করেছি। এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে আমার বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমি এর সঠিক সমাধান (প্রশাসনের হস্তক্ষেপ) চাই।’
মোশী বাবুল ঘরজার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘যেখান থেকে রাস্তাটি শুরু হয়েছে সেই জায়গাটি আমার। আমি আমার জায়গায় বাঁশের বেড়া দিয়েছি। এর জন্য যদি কারো ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাহলে আমার কিছু করার নেই।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘সরকারি অর্থায়নে নির্মিত রাস্তায় বেড়া দিয়ে মানুষের যাতায়াতের পথ বন্ধ করা গুরুতর অপরাধ। বিষয়টি যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে মোশী বাবুল ঘরজার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’