আড্ডা নিয়ে বাঙালির ব্যাপক উন্মাদনা থাকলেও বুদ্ধদেব বসুর মতে আড্ডা শব্দটি ‘উর্দু’ থেকে বাংলায় এসেছে। হিন্দিতে ‘আড্ডা’ বিশেষ্য অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ কিনা কোনও কিছু রাখবার স্থান। যেমন- হাওয়াই-আড্ডা মানে বিমানবন্দর। বাস-আড্ডা মানে বাস ডিপো… এই আড্ডা। কিন্তু বাঙালির আড্ডা স্বভাবে এবং ভাষার আঙ্গিকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এ শুধু ক্ষণিকের বিনোদন নয়, বাঙালি মনন, চিন্তন, শিল্পসাহিত্যের সঙ্গে আত্মিকভাবে জড়িত, তাই বারবার এই বাংলাতেই শুধু আড্ডা মারবার জন্যেই বিভিন্ন সমিতি ও গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। ‘বাংলা শিল্প সাহিত্যে সংস্কৃতির এক বড় উদ্দীপনা শক্তি হল বাঙালির আড্ডা।’ বলেছিলেন নোবেলজয়ী জার্মান সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাস। তিনি এক বছরেরও বেশি সময় কলকাতা ও বাংলাদেশে কাটিয়েছিলেন। তাঁর মতে, আড্ডা প্রতিভা বিকাশের সহায়ক।
সাহিত্যের আড্ডায় চিন্তার আদান-প্রদান যেমন থাকে; পাশাপাশি কবির নতুন লেখাপাঠ, তার বিচার-বিশ্লেষণ কবির লেখাকে পরিপুষ্ট করে তোলে। সাংগঠনিক ভিত্তির মধ্য দিয়ে সাহিত্য সম্মেলনও কবি-লেখককে কাছাকাছি নিয়ে আসে। সাহিত্যের আন্দোলনও পুরনোকে ফেলে নতুন চিন্তা প্রকাশের একটা ভিত্তিভূমি তৈরি করে। কবি ও সাহিত্য সংঘঠক মাহমুদ কামাল তার এক প্রবন্ধে উপরের কথাগুলো লিখেছেন।
সাহিত্য আড্ডা কথাটি শুনতে একটু কম ভারি মনে হলেও আড্ডার আলোচনাগুলো কিন্তু গুরুগম্ভীরই হয়ে থাকে। দেশ সমাজ মানুষ প্রকৃতি এবং এসবের অতীত বর্তমান ভবিষ্যত নিয়ে অনেক দরকারি আলাপ হয় আড্ডায়। এই আড্ডা থেকেই বেরিয়ে আসে নতুন জীবনের তুলনামূলক সুন্দর দর্শন। প্রায় ১২০ বছর ধরে চলা সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা, রবিবাসরীয় সাহিত্য আসর যা এখন শনিবাসরীয় সাহিত্য আসর নামে চলমান। এখানে রয়েছে একঝাক তরুণ এবং অভিজ্ঞ সাহিত্য সাধক। মাইকেল মধুসূদন দত্ত’র যশোর থেকে আসা কবি সাহিত্যিকরা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন বিভিন্ন সময়ে।
সম্প্রতি তাদের শনিবাসরীয় সাহিত্য আড্ডায় আর্থসামাজিক পত্রিকা ‘পূর্বা’ নিয়ে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে কবি সাহিত্যিক এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষানুরাগী উপস্থিত ছিলেন।
এই সময়ের গুরুত্বপূর্ন কবি ও কথাসাহিত্যিক মামুন আজাদ বলেন, পূর্বা খুবই মানসম্পন্ন ম্যাগাজিন। এইমানের পত্রিকা এখন খুব একটা দেখা যায় না। এর লেখার মান এবং বিষয়বৈচিত্র সত্যি মুগ্ধ করার মতো। এই ম্যাগাজিন পাঠ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করার অনেক উপকরণ আছে। এমন একটি পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিক হলে এদেশের পাঠকশ্রেণী উপকৃত হবে।
যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি’র সম্পাদক এস. নিয়াজ মোহাম্মদ পূর্বা পত্রিকার গেটআপ মেকআপ ও লেখার মানের ব্যাপারে ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ছাড়াকার মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাক বলেন, পূর্বা পত্রিকা লাইব্রেরি বিভাগকে সমৃদ্ধ করেছে, তিনি নিয়মিত এই পত্রিকা যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরিতে পাবার আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে পূর্বা নিয়ে আরও কথা বলেন ‘প্রাচ্য সাহিত্যসংঘ’র পরিচালক কবি সেলিম রেজা সেলিম, অগ্রদূত দুলু পাইকার স্মৃতি পাঠাগারের পরিচালক কবি সরকার রায়হান, আলহাজ্ব আমজাদ হোসেন জ্ঞানদ্বীপ পাঠাগারের পরিচালক কবি শ্যামলী বিনতে আমজাদ, যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির সহকারী সম্পাদক ছড়াকার মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাক, লাইব্রেরিয়ান আবু জাহিদসহ উপস্থিত ছিলেন কবি সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক।