রোববার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১৬ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও মানছে না কেউ

আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২৩:২২

দেশে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা, আলু ৩৬ টাকা কেজি ও পেঁয়াজের দাম ৬৫ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হয়। অথচ বাজারে এসব পণ্যের দাম আগের মতোই রয়েছে।

রাজধানীর কাওরান বাজারে পাইকারি ও খুচরা দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাদা ও লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, দেশি পেঁয়াজ প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) ৩৬০ টাকা। আর খুচরা কেজি বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৮০-৯০ টাকা কেজি। ডজন প্রতি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা ও হালিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

সবজির বাজারেও দাম নিয়ে সন্তুষ্ট নন ক্রেতারা। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত ফাল্গুনি আক্তার বাজার দর নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‌‘সবজির দাম চড়া, মাছ-মাংস-মসলা সবকিছুর দাম চড়া। এমন হলে মধ্যবিত্তরা যাবে কোথায়?’

সরকারের বেঁধে দেওয়া নতুন দর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাজারে সরকারের নতুন দর মানছে না কেউ। বাজারে জিনিসপত্রের দাম আগেও যা ছিল, এখনও তাই আছে।’

‘সবজির দাম চড়া, মাছ-মাংস-মসলা সবকিছুর দাম চড়া। এমন হলে মধ্যবিত্তরা যাবে কোথায়?’

এ সম্পর্কে সবজি বিক্রেতা আব্দুল জলিলের সঙ্গেও কথা হয়েছিল। তিনি পাইকারি ও খুচরা উভয় দামেই বিক্রি করছেন। তার দোকানে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি পাইকারি ২০ টাকা, লাউয়ের খুচরা দাম ৫০ টাকা ও পাইকারি ৪০ টাকা, বরবটি পাইকারি ৯০ ও খুচরা ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা পাইকারি ১৫০ টাকা ও খুচরা ৪০ টাকা, বেগুন পাইকারি ৩০ টাকা ও খুচরা ৪০ টাকা এবং আলু ও পেঁয়াজের পাইকারি দাম যথাক্রমে ৮৫ টাকা ও ৬৭ টাকা। জিনিসপত্রের দাম এত বেশি রেখেছেন কেন- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সঠিক দামেই আমরা বিক্রি করছি। আপনার কেনা লাগলে কিনবেন, নয়তো কিনবেন না।’

এর আগে বাজারে ৩ পণ্যের নতুন দর ঘোষণার দিন বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে মধুবাগ বাজারে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, যথারীতি দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজির কম ছাড়ছেন না বিক্রেতারা। স্বপ্নীল নামে বাজারে সবজি কিনতে আসা একজন ক্রেতাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ভাই, জিনিসপত্রের দাম এত বেশি যে আমাদের যাওয়ার কোনো উপায় নেই। না পারি ভিক্ষা করতে, না পারি আয়-রোজগার করতে। অসহনীয় অবস্থা।’

পাশেই ছিলেন সওদাগর মিয়া নামে একজন বিক্রেতা। এই ক্রেতা যখন বাজারে তার অসহায়ত্বের কথা জানাচ্ছিলেন, তখনই ফোঁড়ন কেটে ওই বিক্রেতা বলে ওঠেন, ‘আপনারা খাবেন, আমরা খাবো না? আর জিনিসপত্রের দাম এতটাও বেশি রাখিনি। আপনারাই বেশি কন।’

স্বপ্নীল তখন বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে কথা বলাও রুচির ব্যাপার। কেননা, এভাবে গলাকাটা দাম রেখে আবার আপনারাই গলাবাজি করছেন। এটা কিন্তু ঠিক না।’

এদিকে, শান্তিনগর বাজারে সরেজমিনে ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। সবজির বাজারেও যেমন দাম, মসলা-মাছ-মাংসের বাজারেও তেমনই। বিক্রেতারা যেন একেকজন দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। ক্রেতারাও নাজেহাল হচ্ছেন। একজন ব্যবসায়ী এ বিষয়ে বলেন, ‘৩০০ টাকা যদি রোজগার করি, তাহলে বাজারেই চলে যায় ২৫০ টাকা। কীভাবে সংসার চলবে? আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে যে, কোনো দিন অনাহারে, অর্ধাহারেও থাকতে হয়।’

‘আপনারা খাবেন, আমরা খাবো না? আর জিনিসপত্রের দাম এতটাও বেশি রাখিনি। আপনারাই বেশি কন’

বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি মধ্যবিত্তদের জীবনে নাভিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। বাজার করতে আসা এসব মধ্যবিত্ত ক্রেতা বলেছেন তাদের অসহায়ত্বের কথা। অনেকে বলেছেন, ‘আমরা সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। বাজারে জিনিসপত্রের এত দাম যে স্বাভাবিক জীবন নির্বাহ করাই দায় হয়ে পড়েছে।’

ইত্তেফাক/এইচএ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন