রাজশাহী ও খুলনা জেলায় শিরায় প্রয়োগযোগ্য স্যালাইনের তীব্র সংকট চলছে। বাড়তি টাকা দিয়েও ফার্মেসিতে স্যালাইন মিলছে না। এমনকি সরকারি হাসপাতালগুলোতেও স্যালাইনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী জানান, রাজশাহী জেলায় শিরায় প্রয়োগের স্যালাইন সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় এই স্যালাইনের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় স্যালাইনের সরবরাহ বাড়েনি বরং আগের চেয়ে আরো কমেছে।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় ওষুধের মার্কেট লক্ষ্মীপুর ও সাহেব বাজারের ফার্মেসিগুলোতে শিরায় প্রয়োগের স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। এতে রোগী ও স্বজনরা বিপাকে পড়েছেন। কিছু দোকানে যত্সামান্য স্যালাইন মিললেও দ্বিগুণ বা তারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। জানা যায়, ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় রাজশাহীতে শিরায় প্রয়োগের স্যালাইনের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় স্যালাইন প্রস্তুতকারী কোম্পানি থেকে বাজারে সরবরাহ বাড়েনি, বরং কমেছে। সূত্র জানায়, মূল্য তালিকার দ্বিগুণের বেশি দামে (৯১ টাকা মূল্যের স্যালাইন ২০০ টাকা) বিক্রির দায়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার ‘আরোগ্য নিকেতন ফার্মেসি’র মালিককে ৩০ হাজার টাকা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির দায়ে একই এলাকার ‘আলিফ লাম মিম ফার্মেসি’র মালিককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী। তিনি জানান, দুই দোকানিকে জরিমানার পর বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পক্ষ থেকে মূল্য তালিকা নিশ্চিতের আশ্বাস দেওয়ায় চলমান অভিযান স্থগিত রাখা হয়। তবে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি করলে তদারকিমূলক অভিযান অব্যাহত থাকবে।
রাজশাহীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় স্বল্পমূল্যে ওষুধ বিক্রির জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের স্টিকারপ্রাপ্ত জনপ্রিয়, ড্রাগ মিউজিয়াম ও শাহিন মেডিক্যালসহ বিভিন্ন ফার্মেসির বিক্রয় কর্মীরা জানান, ১০০ ব্যাগ স্যালাইনের চাহিদার বিপরীতে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা সর্বোচ্চ পাঁচ-ছয় ব্যাগ সরবরাহ করছেন। ফলে রোগীদের চাহিদা মতো স্যালাইন দেওয়া যাচ্ছে না।
জানা যায়, স্যালাইন নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজশাহী কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি গত ১২ সেপ্টেম্বর শিরায় প্রয়োগের স্যালাইন প্রস্তুত ও সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জানতে চাইলে রাজশাহী কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি আনসারুল হক খিচ্চু জানান, বৈঠকে স্যালাইন সংকট এবং রোগীদের চাহিদার বিষয়ে কোম্পানি প্রতিনিধিদের অবহিত করতে এবং স্যালাইন সরবরাহ বাড়াতে বলা হয়েছে। তিনি আরো জানান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ১০০ ব্যাগ চাহিদার বিপরীতে যত্সামান্য সরবরাহ করা হচ্ছে। স্যালাইন সরবরাহ না বাড়ালে জনমনে সৃষ্ট অসন্তোষের কথা কোম্পানির প্রতিনিধিদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার ‘জনপ্রিয় ফার্মেসি’র মালিক সফিকুল ইসলাম বাবু জানান, তারা তো ওষুধ বিক্রির জন্যই ২৪ ঘণ্টা ফার্মেসি খোলা রাখছেন। কিন্তু কোম্পানি স্যালাইন সরবরাহ না করলে তাদের করণীয় কী?
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একটি সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা জানান, সরকারি জনস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস আগে শিরার স্যালাইন উত্পাদন করত। কয়েক বছর আগে বিকল্প উত্পাদনের ব্যবস্থা ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি থেকে স্যালাইন উত্পাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন সরকারি ‘এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)’ এই স্যালাইন উত্পাদন করবে বলেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে ইডিসিএল এখনো এই স্যালাইন উত্পাদন শুরুই করেনি। তবে ইডিসিএল বেসরকারি কোম্পানি বেক্সিমকো, স্কয়ার, এক্?মি, পপুলার, ওরিয়ন, লিবরা ও অপসোনিন থেকে এই স্যালাইন কিনে সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করছে। অসমর্থিত সূত্র মতে, বর্তমানে সরকারি হাসপাতালেও শিরার স্যালাইনের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি হাসপাতালও প্রয়োজনে বাজার থেকে স্যালাইন কিনছে বলে ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
খুলনা অফিস জানায়, খুলনায় আইভি (শিরায় দেওয়া) স্যালাইনের তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বাড়তি টাকা দিয়েও ফার্মেসিতে স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। দু-একটি দোকানে পাওয়া গেলেও রাখা হচ্ছে তিন গুণ দাম। এর মধ্যে গত বুধবার বাড়তি দাম রাখার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তবে এরপর থেকে স্যালাইন সংকট আরো তীব্র হয়েছে।
এদিকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও রয়েছে স্যালাইন সংকট। গত সপ্তাহের প্রায় পুরোটা জুড়ে হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগীদের কোনো স্যালাইন দেওয়া হয়নি। অবশ্য বৃহস্পতিবার হাসপাতালটিতে ৩ হাজার লিটার স্যালাইন এসেছে। কিন্তু চিকিত্সাধীন থাকা বিপুলসংখ্যক রোগীর তুলনায় এটি খুবই সামান্য। চিকিত্সকরা জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে দিনে এক থেকে দুই লিটার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরও বেশি স্যালাইন দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে। ডেঙ্গু রোগীর চিকিত্সায় সাধারণত দশমিক ৯ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড স্যালাইন রোগীর শরীরে পুশ করতে হয়। চিকিত্সকেরা এটাকে ‘নরমাল স্যালাইন’ বলে থাকেন।
গত বুধবার নগরীর শান্তিধাম মোড়ের একটি ফার্মেসিতে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেখানে ৮৭ টাকা মূল্যের স্যালাইন ২০০ টাকায় বিক্রি করার অভিযোগে দোকানটিকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর থেকে আশপাশের দোকানদাররা স্যালাইন বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।