রোববার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১৬ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষশূন্য গ্রাম, কাজ হারাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোক

রাউজানে আসামি ছিনিয়ে পিটুনিতে হত্যার মামলা

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:৫০

চট্টগ্রামের রাউজানে কলেজছাত্র সিবলী সাদিক অপহরণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি উমংচিং মারমাকে পুলিশের ভ্যান হতে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে অনেকটা পুরুষশূন্য হয়ে আছে কলদপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম।

পুলিশের কাজে বাধা ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় পাঁচ জনের নাম উল্লেখ এবং আসামি ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে গত সোমবার পৃথক দুটি মামলা করে রাউজান থানা পুলিশ। ঘটনার দিন মসজিদের ইমাম, কাঠমিস্ত্রিসহ কয়েক জনকে পুলিশ আটক করলেও পরে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা যায়। রাউজান থানার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমান মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সুনিশ্চিত সাক্ষ্য-প্রমাণসাপেক্ষে আসামি গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অযথা কাউকে হয়রানি করা হবে না।

১৪ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টায় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, পঞ্চপাড়া গ্রামের আশেপাশের এলাকায় মানুষের চলাচল খুবই কম। আশরাফ শাহ দরগাহ গেট-সংলগ্ন অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। আশপাশের গ্রামগুলোতে অনেকটা নীরবতা বিরাজ করছে।

স্থানীয় আব্দুল মান্নান বলেন, ঘটনার পর হতে এলাকার কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। একদিকে গ্রেফতারের ভয়, অন্যদিকে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের ভয়। অনেকটা পুরুষশূন্য হয়ে আছে পঞ্চপাড়া গ্রাম। স্থানীয় (৯ নম্বর ওয়ার্ড) ইউপি সদস্য আলী আকবর বলেন, এলাকার পরিস্থিতি এখন বেশ শান্ত রয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর হতে কলদপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন ইউনিয়নে দোকান-পাটে, খামারে, বাগানে, বসতবাড়িতে দৈনিক ও মাসিক মজুরিতে কর্মরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজনকে কাজ থেকে ইতিমধ্যে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে তাদের কাজে নেওয়া হচ্ছে না। তাদের কাজে না রাখার জন্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া হচ্ছে।

‘হত্যার চার দিন পর ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ নেয় খুনিরা’

চট্টগ্রাম অফিস জানায়, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় কলেজছাত্র সিবলী সাদিককে অপহরণের পর হত্যার ঘটনার চার দিন পর তার পরিবারের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল হত্যাকারীরা। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট জোনায়েদ আহমদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য দেন মামলার অন্যতম আসামি অং ফ্রাই সিং মারমা। রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল হারুন গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, অং ফ্রাই সিং মুক্তিপণের ২ লাখ টাকা সিবলীর পরিবার থেকে নেওয়ার কথা এবং পুরো ঘটনায় জড়িত থাকার কথা জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন। 

আদালতে অং ফ্রাই সিং মারমা আরো বলেন, ‘গত ২৮ আগস্ট তিনিসহ সাত-আট জন যুবক সিবলীকে তার রাউজানের খামার থেকে অপহরণ করে গহিন পাহাড়ে নিয়ে যান। পরদিন হত্যা করে লাশ পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রাখা হয়। পরে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চান। এরপর সিবলীর স্বজনেরা মুক্তিপণ দিতে রাজি হলে বান্দরবান চলে যান অং ফ্রাই সিং। সিবলীর বাবা গত ২ সেপ্টেম্বর দুজনকে নিয়ে বান্দরবান জেলা সদরের একটি গহিন পাহাড়ে অং ফ্রাই সিংয়ের হাতে মুক্তিপণের ২ লাখ টাকা দিয়ে আসেন। ’

এদিকে গত মঙ্গলবার গ্রেফতার দুই আসামি সুইচিংমং মারমা ও অংথুইমং মারমা আদালতে জবানবন্দিতে বলেন, মাসখানেক আগে খামারের কাজ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সিবলীর সঙ্গে কয়েক জন শ্রমিকের ঝগড়াঝাটি হয়। এই ঘটনায় ঐ শ্রমিকরা সিবলীকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেয়।

ইত্তেফাক/এএইচপি