লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সক্রিয় হয়ে ওঠা মোটরসাইকেল চোরের সিন্ডিকেট ধরতে পারছে না পুলিশ। গত এক বছরে রায়পুরে থেকে জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক ও এনজিও কর্মকর্তাসহ অন্তত ৫৬টি মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে গেছে সিন্ডিকেটটি।
এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি একটি মোটরসাইকেলও। প্রকাশ্যে চুরির ফুটেজসহ থানায় অভিযোগ দিলেও গত ছয় মাসেও চোরকে চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। এতে মোটরসাইকেলে মালিকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, রায়পুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়র ও পৌর শহর থেকে গত এক মাসে ৫৬টি মোটরসাইকেল চুরি হয়। বেশির ভাগ মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে প্রকাশ্য দিবালোকে। বিভিন্ন মসজিদ, অফিস, মার্কেট ও ব্যাংক চত্বর থেকে। মোটরসাইকেল চুরির পর ভুক্তভোগীরা থানায় গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে জিডি কিংবা অভিযোগ লিখিত নেয়। যার কারণে, মোটরসাইকেল চুরির সঠিক তথ্য থানা পুলিশের রেকর্ডেও থাকে না। কিন্তু শহরের অধিকাংশ চুরির ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ থাকলেও চোর চক্রকে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব চুরি ঠেকাতেও নেই তেমন কোন তৎপরতাও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রায়পুর, রামগঞ্জ এবং হাজিগঞ্জ জেলার সমন্বয়ে মোটরসাইকেল চুরির কয়েকটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে। রায়পুর পৌর শহর বা উপজেলা থেকে মোটরসাইকেল চুরির পর নিয়ে যাওয়া হয় পানপাড়া হয়ে রামগঞ্জ উপজেলা ও হাজিগঞ্জে। রামগঞ্জ ও হাজিগঞ্জে চোরাই মোটরসাইকেল বেশি বিক্রি হচ্ছে। দুই-আড়াই লাখ টাকার মোটরসাইকেল ৬০-৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে সেখানে। মোটরসাইকেল কিনে ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে উঠতি বয়সী কিশোররা। কয়েক বছর আগে এসব এলাকা থেকে পুলিশ চোরের সিন্ডিকেট ধরে বেশ কিছু মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছিল। এরপর বেশ কিছুদিন চুরি বন্ধ ছিল। সম্প্রতি পৌর শহরের নতুন বাজার এলকার পারভেজ ও শুকুরের নামের এই দুই ব্যক্তির নেতৃত্বে মোটরসাইকেল চোরের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, একটি মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িত থাকে তিনজন। প্রথম ব্যক্তি চুরি করে, দ্বিতীয় ব্যক্তি চালককে অনুসরণ করে ও তৃতীয় ব্যক্তি আশপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেন। চুরির পর সেই মোটরসাইকেল দ্রুত পার্শ্ববর্তী কোনো গ্যারেজে রাখেন প্রথম ব্যক্তি। এরপর সুযোগ বুঝে অন্য দুজন সন্ধ্যার পর বা ভোর রাতে অন্যত্র নিয়ে যান। পরে আরেকটি চক্রের মাধ্যমে মোটরসাইকেলের চেচিস ও ইঞ্জিন নাম্বার পরিবর্তন করে বিআরটিএর জাল কাগজপত্র তৈরি করে বিক্রি করে দেয়।
গত এক বছরে রায়পুর পৌর শহরে থেকে ২৮টি, সোনাপুর থেকে পাঁচটি, চরপাতা থেকে তিনটি, উত্তর ও দক্ষিণ চরবংশী এবং চরআবাবিল থেকে আটটি, বামনী থেকে দুটি, রায়পুর ইউনিয়ন থেকে ছয়টি, কেরোয়া থেকে চারটি মোটরসাইকেল চুরি হয়।
রায়পুর উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি পীরজাদা মাদুস হোসাইন বলেন, ‘গত এক বছরে রায়পুর থেকে মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে ৫৬টি। মোটর সাইকেল চুরির পর ভুক্তভোগীরা থানায় গেলে মামলা নেয়া হয় না। ফলে এসবের কোন রেকর্ড থাকে না। গত সাপ্তাহে আমার নিজের সুজুকি মোটরসাইকেলটি শহরের মীরগঞ্জ থেকে চুরি হয়। থানায় মামলা না নেওয়ায় পরে অভিযোগ করতে হয়েছে। আজও মোটরসাইকেলটি উদ্ধার হয়নি।’
রায়পুরে মোটরসাইকেল চুরি বেড়ে যাওয়ার বর্ণনা দিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) সামছুল আরিফিন বলেন, ‘মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় থানায় ১০-১২টি লিখিত অভিযোগসহ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। মোটরসাইকেল চুরি ঠেকাতে থানা পুলিশের একটি বিশেষ টিম কাজ শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে মোটরসাইকেল চুরি কমে যাবে। সেই সঙ্গে চোরের সিন্ডিকেটও ধরা পড়বে।’