প্রায় চার কেজি হেরোইনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সাজা কমানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাষ্ট্রপক্ষ। খোদ রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন এই প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের যে ধারায় আসামির সাজা কমিয়ে দশ বছর করেছে তা আইনানুযায়ী সঠিক হয়নি। কারণ ওই ধারায় হয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড না হলে যাবজ্জীবন দিতে হবে। যদি এর কোনটিই না দেয় তাহলে আসামিকে খালাস দিতে হবে। মৃত্যুদণ্ড হ্রাস করে কোনভাবেই দশ বছর সাজা দেওয়ার সুযোগ নাই।
এদিকে হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়। বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে এই স্থগিত আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে দেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ এলাকার কোদাল কাটি এলাকা থেকে ২০১২ সালের ২৯ মার্চ সন্ধ্যা ৬ টার সময় তিন কেজি ৭০০ গ্রাম হেরোইনসহ মো. শরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি)। পালিয়ে যান আরেক আসামি মো. জামাল উদ্দিন সেন্টু। এ ঘটনায় পরদিন নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করেন জেসিও মো. মোবারক হোসেন। ওই বছরের ২৫ মে দুই আসামিকে অভিযুক্ত করে দেওয়া হয় চার্জশিট।
এতে বলা হয়, আসামি শরিফুলের নিকট হতে জব্দকৃত আলামত রাসায়নিক পরীক্ষায় হেরোইন প্রমাণিত হয়েছে। এই মামলায় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে নয়জন সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা এবং যুক্তিতর্ক শেষে ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর শরিফুলকে মৃত্যুদণ্ড দেন অতিরিক্ত দায়রা জজ মো. জিয়াউর রহমান।
রায়ে তিনি বলেন, মাদক সমাজে সন্ত্রাস ছড়ায়। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়। ভীতি ও ত্রাস সৃষ্টি করে। মাদকের প্রভাব নাগরিকের শান্তিপূর্ণ জীবনের প্রতি সব সময়ের জন্য হুমকি।
রায়ে বিচারক বলেন, ২৫ গ্রামের ওপর হেরোইন উদ্ধার প্রমাণ হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯০ এর ১৯(১) টেবিলের ১(খ) ধারার অপরাধে শাস্তি কমপক্ষে যাবজ্জীবন। এক্ষেত্রে শরিফুলের নিকট হতে বিপুল পরিমাণ অর্থাৎ তিন কেজি ৭০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়। অপরাধের ধরন, প্রকৃতি ও মাত্রা বিবেচনায় শরিফুলকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ওই ধারার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড এবং দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হলো। অপর আসামি জামাল উদ্দিনকে খালাস দেওয়া হলো। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত করতে না পারায় খালাস দেওয়া হলো।
বিচারক রায়ে বলেন, প্রসিকিউটিং এজেন্সির নিকট দেওয়া এক্সট্রা জুডিশিয়াল কনফেশান এর কোনো আইনগত ভিত্তি নাই। গ্রেপ্তারকৃত আসামি শরিফুলের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সহযোগী আসামি হিসেবে জামালকে অন্য নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য সাক্ষীর সমর্থন ব্যাতীত দোষী সাব্যস্ত করার আইনগত সুযোগ নাই।
এই রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই আপিল করেন আসামি। পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরনে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের নের্তৃত্বাধীন দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড হ্রাস করে আসামিকে দশ বছরের সাজা দেন। এই সাজা দিয়ে আসামিকে মুক্তির আদেশ দেন।
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, আসামির ২০১২ সাল থেকে কারাগারে আছেন। সেই হিসেবে তার দশ বছর সাজা খাটা হয়েছে। এ কারণে তাকে মুক্তির আদেশ দেওয়া হলো।
এই রায়ের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আবেদনের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী শুনানি করেন। শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালতের বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম হাইকোর্টের রায় স্থগিতের পাশাপাশি আসামিকে কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে স্থানান্তরের আদেশ দেন।