মাদারীপুরের হিমাগারে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু মজুদ থাকার পরও বাজারে দেখা দিয়েছে আলুর কৃত্রিম সংকট। অসাধু ব্যবসায়ীদের মজবুত সিন্ডিকেট তৈরি করার ফলে জেলার হাটবাজারে কমছে না আলুর দাম। ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাইরেও কেজি প্রতি ১৫-২০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে আলুর দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। তবে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রশাসন।
সম্প্রতি আলুর অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে সারাদেশে প্রতি কেজি আলু ৩৫-৩৬ টাকা বিক্রির জন্য দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু মাদারীপুরের হাটবাজারগুলোতে এই মূল্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫- ৫০ টাকায়। এতে প্রভাব পড়েছে জেলার নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। সাধারণ ক্রেতারা জানায়, হিমাগারে আলু থাকলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করে এই দাম বাড়িয়েছে।
জেলার হিমাগার কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, মাদারীপুর বিসিক শিল্প নগরীর হিমাগারে বর্তমানে ৫৬০ জন কৃষক ও ব্যবসায়ীর ৩০ হাজার বস্তা আলু মজুদ আছে। যার একেকটি বস্তায় ৫০-৬০ কেজি করে আলু রয়েছে। সব মিলিয়ে মোট মজুদ এক হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন আলু মজুদ রয়েছে। তবে মজুদ রাখা এসব আলু চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যেই ব্যবসায়ী ও চাষিদের নিতে হবে। নভেম্বরের শেষদিকে শুরু হবে নতুন আলু সংরক্ষণ প্রক্রিয়া।
শহরের পুরান বাজারে আলু কিনতে আসা শিপন মল্লিক নামে একজন ক্রেতা বলেন, ‘শুনেছি আমাদের জেলার কোলেস্টরলে অনেক আলু রয়েছে। তারপরও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে বেশি দামে খুচরা বাজারে আলু ছাড়ে। এজন্য আমাদেরও খুচরা বাজার থেকে বেশি দামে আলু কিনতে হয়। আমরা খুব সমস্যায় আছি। আমরা চাই আলুর দাম আগের দামে ফিরিয়ে আনা হোক।’
আরিফুর রহমান নামে আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘কয়েক মাস আগেও ১৫-২০ টাকায় আলু কিনছি। সেই আলু এখন ৪৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এই আলু খেয়েই তো আর জীবন বাঁচে না, আরও অনেক তরকারি কিনতে হয়। প্রশাসনের কোনো নজরদারি নাই। তারা যদি শক্ত নজরদারি চালায় তাহলে আলুর দাম আগের দামে ফিরে আসবে।’
মিঠুন মণ্ডল নামে আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘সরকার থেকে আলুর দাম নাকি নির্ধারণ করে ৩৫ টাকা করে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের তো ৪৫ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। এখন তো সিন্ডিকেটের কাছে সরকার অসহায় বলে মনে হচ্ছে আমাদের।’
সিন্ডিকেটের বিষয়ে ইত্তেফাকের এই সংবাদদাতার প্রশ্নের জবাবে মাদারীপুর হিমাগারের ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল করিম বলেন, ‘জেলায় চলতি মৌসুমে আলুর উৎপাদন কম হওয়ায় দামটা একটু বেশি। তবে এবার এখন পর্যন্ত হিমাগারে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলু মজুদ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা চাইলেই বাজারে আলু ছাড়া সম্ভব। এ বিষয়ে হিমাগার কর্তৃপক্ষ সব সময়ের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত মূল্য ২৮ টাকায় হিমাগার থেকে বাজারে আলু ছাড়া হলে খুচরা বাজারে ভোক্তার হাতে ৩৫-৩৬ টাকায় প্রতি কেজি আলু বিক্রি করা সম্ভব। কিন্তু অসাধু কিছু ব্যবসায়ী আলু মজুদ করে দাম বাড়ানো অব্যাহত রেখেছে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে।’
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাইনউদ্দিন বলেন, ‘হাটবাজারগুলোতে আলুর দাম বেড়েছে এমন খবরে অভিযান চালানো হচ্ছে। এছাড়া, যারা অবৈধভাবে আলু মজুদ করে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’