বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

আরিচা-কাজীরহাট রুটে নৌ চলাচল ব্যাহত

ড্রেজিংয়ে সুফল মেলেনি দেড় মাসেও

আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:০৭

বর্ষা মৌসুম শেষ না হতেই পদ্মা-যমুনায় বিশেষ করে আরিচা-কাজীরহাট নৌরুটে পলি জমে চ্যানেল ভরাট হওয়ায় ফেরি-লঞ্চ, কার্গো, নৌকা চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ রুটে প্রায় অর্ধেক বোঝাই নিয়ে ঘুর পথে ফেরি চলাচল করায় সময় ও জ্বালানি অপচয় হওয়ায় বিআইডব্লিউটিসির রাজস্ব আয় কম ও ফেরির যান্ত্রিক ক্ষমতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় এক ব্যবসায়ী  আরিচা ঘাট বরাবর যমুনা তীরবর্তী ২৮৬৮ একর ভূমি বালু মহল হিসেবে ইজারা নেন। ড্রেজিংকৃত হাজার-হাজার ঘন মিটার পলি ইজারাকৃত স্থানে স্তূপাকারে রেখে ঐ ইজারাদারের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। কর্মকর্তারা জানান, শুষ্ক মৌসুমে ফেরি চলাচলের লক্ষ্যে অন্তত ১০ ফুট গভীরতার চ্যানেল তৈরি করা হয়। সরকারি নির্দেশনায় ফোরসোর ভূমিতে ড্রেজিংকৃত পলি জমা করা হয়। এবার বর্ষায় স্রোতে আসা পলি জমে আগের চ্যানেল ভরাট হয়ে গেছে।

জানা গেছে, এ বছর ভরা বর্ষা মৌসুমে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে বেশি গভীরতার রো-রো ফেরি পূর্ণ বোঝাই দিয়ে চলাচল করলেও গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সমস্যা দেখা দেয়। নৌ চ্যানেল সংরক্ষণ ও পরিচালনার একমাত্র কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটি-এর ড্রেজিং ইউনিট বিভাগ সূত্রে এর কারণ হিসেবে বলা হয়, গত ১৩ জুলাই আরিচা- কাজীরহাট রুটের বিভিন্ন স্থানে একটি ড্রেজার দিয়ে পলি অপসারণ শুরু হয়। ড্রেজিং ইউনিট যন্ত্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহাবুল ইসলাম শিহাব ইত্তেফাককে জানান, এ পয়েন্টে বর্তমানে আটটি ড্রেজার মোতায়েন রয়েছে। সংস্থার এ সকল নিজস্ব ড্রেজার দিয়ে সিভিল সেকশন নির্ধারিত স্থানে ড্রেজিং হচ্ছে।

অপরদিকে, এবার ১৫ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও প্রতি ঘন মিটারে ব্যয় কত তা না জানিয়ে ঐ কর্মকর্তা নানা কৌশল অবলম্বন করেন। এদিকে, গত বর্ষায় পাহাড়ি ঢল, প্রবল স্রোত ও ভাঙনের ফলে হাজার-হাজার ঘন মিটার পলিতে নদীগর্ভের নৌ চ্যানেল সমূহ দ্রুত ভরাট হয়ে যায়। গত বছর এ রুটের স্পর্শকাতর চ্যানেলগুলোতে ড্রেজিং করা হলেও পরের বছর বর্ষার শুরুতেই তা নৌ চলাচলের উপযুক্ততা হারায়। ফলে, চিহ্নিত

নৌ চ্যানেল যোগে ফেরি, লঞ্চ, কার্গো ইত্যাদি চলাচল ব্যাহত হয়। তবে এ রুটে ফেরি, লঞ্চ চলাচলে সংকট সৃষ্টি হওয়ায় চলতি বছর আগস্টের প্রথম সপ্তাহে আরিচা ২ ও ৩ নম্বর ফেরি ঘাটে ফেরি মোড় নেওয়ার সুবিধার্থে ৩৬০ ফুট প্রস্থ বেসিন ও ১ হাজার ২০০ ফুট দীর্ঘ চ্যানেল তৈরির জন্য চিহ্নিত স্থানে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু হয়।

ফেরি চলাচল নিয়ন্ত্রণের দায়িতপ্রাপ্ত বিআইডব্লিউটিসি আরিচা সেক্টরের ডিজিএম মো. খালেদ নেওয়াজ ইত্তেফাককে জানান, যেখানে রোল অন-রোল অব ফেরিতে পণ্যবোঝাই ২৭টি ট্রাক বা সমসংখ্যক যানবাহন নিয়ে ফেরি চলাচল করলে এ সংস্থা পূর্ণ রাজস্ব আয় করতে পারে। ফেরি চলাচলের জন্য ১০/১২ ফুট গভীরতার নাব্য দরকার। কিন্তু এবার বর্ষায় চ্যানেল ভরাট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভৃতি কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হয়। এ পরিস্থিতিতে আরিচা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তরে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া চ্যানেল যোগে ফেরি চলাচল করছে। তবে পূর্ণ বোঝাই না নেওয়ায় ও অধিক সময় লাগায় জ্বলানি খরচ বেশি হচ্ছে। এতে সময় অপচয় ও রাজস্ব আয় কম হচ্ছে। অথচ আরিচা ঘাট বরাবর নদীবক্ষে ড্রেজিং চললেও এখনো তেমন কোনো সুফল মেলেনি।

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন