বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ওয়ানডে বিশ্বকাপের শুরু থেকে সর্বশেষ  

আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:৫৬

আগামী ৫ অক্টোবর পর্দা উঠবে ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১৩তম আসরের। এবারের বিশ্বকাপ এককভাবে আয়োজন করছে ভারত। ১০ দলের অংশগ্রহণে ১০ ভেন্যুতে ৪৬ দিনে অনুষ্ঠিত হবে ৪৮ ম্যাচ। আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লি, ধর্মশালা, হায়দারাবাদ, কলকাতা, লখনউ, মুম্বাই ও পুনেতে ব্যাটে-বলে মুন্সিয়ানা দেখাবেন বিশ্বের নামীদামী ক্রিকেটাররা।

৫ অক্টোবর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড মুখোমুখি হবে আহমেদাবাদে। একই ভেন্যুতে ফাইনাল হবে ১৯ নভেম্বর। বিশ্বকাপের ১৩তম আসর শুরুর আগে চলুন এক নজরে দেখে নেই আগের ১২ আসর কেমন ছিল... 

প্রথম বিশ্বকাপ (১৯৭৫ সাল)  
ওয়ানডে ক্রিকেট চালু হয় ১৯৭১ সালে। এর চার বছর পর ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালে। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত ক্রিকেটের বৃহৎ এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইংল্যান্ডে। ৮টি দেশের অংশগ্রহণে ৭ই জুন থেকে ২১শে জুন পর্যন্ত ১৫ দিন ধরে চলে ক্রিকেটের প্রথম বৈশ্বিক আসর। স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও অন্য ৫টি টেস্ট খেলুড়ে দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে শ্রীলঙ্কা ও পূর্ব আফ্রিকা। তখন, অবশ্য বিশ্বকাপকে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের নামে বলা হতো প্রুডেনশিয়াল বিশ্বকাপ। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।   

দ্বিতীয় বিশ্বকাপ (১৯৭৯ সাল) 
১৯৭৯ সালে প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপের মতো দ্বিতীয় বিশ্বকাপেরও আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ক্রিকেট বিশ্বকাপ ছিল প্রথম বিশ্বকাপের মতোই। বৈশ্বিক এই আসরে ছয়টি দল সরাসরি অংশগ্রহণ করে। আর বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসে শ্রীলঙ্কা ও কানাডা। প্রত্যেক দল গ্রুপ পর্বের ম্যাচে তিনটি করে ম্যাচ খেলে। প্রতি গ্রুপ থেকে সেরা দুটি দল জায়গা করে নেয় সেমিফাইনালে। সেমিফাইনালে পাকিস্তান ও ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে পর পর দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের উল্লাসে মাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

তৃতীয় বিশ্বকাপ (১৯৮৩ সাল) 
১৯৮৩ সালে আগের দুবারের মতো তৃতীয় ক্রিকেট বিশ্বকাপও আয়োজন করে হ্যাটট্রিক করে ইংল্যান্ড। এই বিশ্বকাপেও অংশ নেয় ৮টি দল। অংশগ্রহণকারী ৮ দলের মধ্যে আইসিসি ট্রফি জয় করে নিজদের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিল জিম্বাবুয়ে। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় ভারত। আর লর্ডসে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে শিরোপা জয় করে কপিল দেবের নেতৃত্বাধীন ভারত।

চতুর্থ বিশ্বকাপ (১৯৮৭ সাল) 
১৯৮৭ সালে চতুর্থ বিশ্বকাপ আয়োজিত হয় ভারতীয় উপমহাদেশে। ১৯৮৭ বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল ভারত ও পাকিস্তান। আগের তিনবার ৬০ ওভারের বিশ্বকাপ হলেও এবার প্রথমবার আয়োজিত হয় ৫০ ওভারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ। আর এটিই ছিল লাল বলে আয়োজিত হওয়া সর্বশেষ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। চতুর্থ বিশ্বকাপেও অংশগ্রহণ করে আটটি দল। সেমিফাইনালে পাকিস্তান ও ফাইনালে ইংল্যান্ড হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পায় অস্ট্রেলিয়া।

পঞ্চম বিশ্বকাপ (১৯৯২ সাল)
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে ছোঁয়া লাগে আধুনিকতার। তাই এই বিশ্বকাপকে আধুনিক বিশ্বকাপও বলা যায়! প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ মঞ্চে রঙিন পোশাক, সাদা বল, উভয় প্রান্তে নতুন বল, ডে-নাইট ম্যাচ, নির্দিষ্ট ফিল্ডিং রেসট্রিকশন ইত্যাদি সংযুক্ত হয়। এছাড়াও এই বিশ্বকাপেই প্রথম যুক্ত হয় বৃষ্টি আইন। আগের বিশ্বকাপে ৮ দল অংশগ্রহণ করলেও প্রথমবারের মতো এই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে নয়টি দল। বর্ণবাদের জন্য ২২ বছর নির্বাসনে থাকার পর এই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯৯২ বিশ্বকাপ যৌথভাবে আয়োজন করে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। মেলবোর্নের ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হয় পাকিস্তান-ইংল্যান্ড। ফাইনালে ২২ রানের জয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের উল্লাসে মাতে ইমরান খানের পাকিস্তান।

ষষ্ঠ বিশ্বকাপ (১৯৯৬ সাল)
১৯৯৬ বিশ্বকাপের ষষ্ঠ আসর আয়োজিত হয় ভারতীয় উপমহাদেশে। ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে আয়োজকের দায়িত্ব পায় শ্রীলঙ্কা। এই বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করে ১২টি দল। এই বিশ্বকাপে উত্থান হয় শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে ফেভারিট তকমা না থাকলেও সবাইকে অবাক করে করে বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে অর্জুন রানাতুঙ্গার শ্রীলঙ্কা। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারায় লঙ্কানরা। 

সপ্তম বিশ্বকাপ (১৯৯৯ সাল)
১৯৯৬ বিশ্বকাপের তিন বছর পর ১৯৯৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় ক্রিকেট বিশ্বকাপে সপ্তম আসর। প্রথম তিন বিশ্বকাপ আয়োজনের ১৯৯৯ সালে আয়োজক হয় ইংল্যান্ড। যদিও প্রথম তিন বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল শুধু ইংল্যান্ড। তবে এবার তাদের সঙ্গে আয়োজক হিসেবে যোগ দেয় নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড। এই বিশ্বকাপে প্রথমবার অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ। অভিষেক বিশ্বকাপ বেশ স্মরণীয় করে রাখে বাংলাদেশ। 

তৃতীয় ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম জয় পায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। আর বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট পাকিস্তানকে ৬২ রানে হারায় বাংলাদেশ। এ আসরে ফাইনাল খেলে পাকিস্তান। ফাইনালে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তোলে অস্ট্রেলিয়া। 

অষ্টম বিশ্বকাপ (২০০৩ সাল)
২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের অষ্টম আসর যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়ায়। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে ১৪টি দল। টেস্ট খেলুড়ে ১০ দেশের সঙ্গে স্বাগতিক হিসেবে সুযোগ পায় কেনিয়া। এই বিশ্বকাপ ছিল বাংলাদেশের জন্য চরম হতাশার। একটা ম্যাচও জিততে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এই আসরে ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে তৃতীয় শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া।  

নবম বিশ্বকাপ (২০০৭ সাল)
২০০৭ বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই বিশ্বকাপে ১৬টি দল অংশগ্রহণ করে। ২০০৩ বিশ্বকাপ হতাশার কাটলেও ২০০৭ ছিল বাংলাদেশের জন্য সেরা বিশ্বকাপ। শক্তিশালী ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারায় হাবিবুল বাশারের দল। সুপার এইটে আয়ারল্যান্ডের হারলেও এই বিশ্বকাপ বাংলাদেশকে দিয়েছে দুহাত ভরে। ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে হ্যাটট্রিক বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড গড়ে অস্ট্রেলিয়া। 

দশম বিশ্বকাপ (২০১১ সাল)
২০১১ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করে বাংলাদেশ। ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা ওঠে দশম ক্রিকেট বিশ্বকাপের। ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ স্মরণীয় হয়ে আছে শচীন টেন্ডুলকারের জন্যও। ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শিরোপা জেতে ভারত। সেইসঙ্গে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পান শচীন। 

একাদশ বিশ্বকাপ (২০১৫ সাল)
২০১৫ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ আবারও ফেরে তাসমান সাগরের পাড়ে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত ফাইনালে মুখোমুখি হয় দুই স্বাগতিক দেশ। ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়ে পঞ্চম বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তোলে অস্ট্রেলিয়া।

দ্বাদশ বিশ্বকাপ (২০১৯ সাল) 
২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয় ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে। এই বিশ্বকাপে ব্যাটে-বল পুরো বিশ্বকে তাক লাগান বাংলাদেশের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে ৮৬.৫৭ গড় ও ৯৩.০৩ স্ট্রাইক রেটে ৬০৬ ও বল হাতে ১১ উইকেট তুলে নেন সাকিব। তার এমন পারফরম্যান্সের পরও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। লর্ডসে অনুষ্ঠিত ফাইনালে মুখোমুখি হয় স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে সুপার ওভারে জিতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপের জয়ের আনন্দে ভাসে ইংল্যান্ড।

ইত্তেফাক/এআই

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন