অনুমোদন ছাড়াই লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফিজিওথেরাপি সেন্টার ও ডেন্টাল কেয়ার (দাতব্য চিকিৎসালয়)। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স থাকলেও নবায়ন হয় না বছরের পর বছর।
জানা গেছে, কোনো প্রতিষ্ঠানই স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ম-নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে না, রয়েছে প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব। সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে। এতে একদিকে রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য সেবা থেকে, অপরদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
‘বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমোদন নেওয়ার সময় কাগজে-কলমে চিকিৎসক, ডিপ্লোমাধারী প্যাথলজিস্ট দেখায়। অনুমোদন পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালালে আবেদনের সময় দেওয়া তথ্যের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় না’
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন বছরে দুই-একবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করলেও পরবর্তিতে মনিটরিং না থাকায় দিব্যি চলতে থাকে অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর বাণিজ্য। এছাড়া, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ফার্মেসিতে অবৈধভাবে হাতুড়ে চিকিৎসকদের অপচিকিৎসায় প্রতারিত হচ্ছেন দরিদ্র রোগীরা। সম্প্রতি এক হাতুড়ে চিকিৎসকের লাখ টাকা জরিমানা করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বেশ কয়েকটি সূত্র জানায়, হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সরকারি অনুমোদন (লাইসেন্স) থাকলেও বেশির ভাগ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া পরিচালিত হচ্ছে।
চলতি বছর মে মাসে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু তা বাস্তবায়নের তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। পৌর শহরে গত দুই বছরেও অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক, ফিজিওথেরাপি সেন্টার ও ডেন্টাল কেয়ারে কোনো অভিযান হয়নি। যারা বৈধভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন, তারা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। উপজেলায় প্রায় ৭০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক, ফিজিওথেরাপি সেন্টার ও ডেন্টাল কেয়ার রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্র জানায়, রায়পুরে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক আছে ১৭টি। এর মধ্যে হালনাগাদকৃত লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র পাঁচটি। এছাড়া, তালিকার বাইরের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে কোনো তথ্য নেই। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে কমিশন পাচ্ছে দালাল চক্র। ফলে উন্নত চিকিৎসা সেবার নামে ঠগবাজি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দুই কর্মকর্তা জানান, ‘বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমোদন নেওয়ার সময় কাগজে-কলমে চিকিৎসক, ডিপ্লোমাধারী প্যাথলজিস্ট দেখায়। অনুমোদন পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালালে আবেদনের সময় দেওয়া তথ্যের সাথে মিল পাওয়া যায় না।’
বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ১০ শয্যার অনুমোদন নিয়ে রাখা হয় ১৫ শয্যা। হাতুড়ে সেবিকাদের দিয়ে রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। রোগ নির্ণয়ের জন্য মানসম্মত যন্ত্রপাতি বা ল্যাব টেকনোলজিস্ট (ল্যাব কারিগর) নেই। সার্বক্ষণিক এমবিবিএস চিকিৎসকের বদলে থাকেন ম্যানেজার ও মালিক। খণ্ডকালীন চিকিৎসকরা জটিল অস্ত্রোপচারসহ অন্যান্য চিকিৎসা করছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বাহারুল আলম বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বেশির ভাগেরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। ছাড়পত্র না নিয়ে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান চালানোর কোনো সুযোগ নেই। জনবল সংকটের কারণে আমরা প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে নজরদারি করতে পারছি না। তবে দ্রুতই অবৈধভাবে চলা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্প্রতি কাগজপত্র না থাকায় আমরা (প্রতিষ্ঠানগুলো) বন্ধ করে দিয়ে এসেছি, এখন চলছে কিনা জানি না।