ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) কর্মকর্তাদের লাগাতার কর্মবিরতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে অধিকাংশ কার্যক্রম। গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মকর্তা সমিতি 'ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি' এর ব্যানারে ১৬ দফা দাবি জানিয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছে। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত চলমান কর্মবিরতির ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন কাজে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
প্রথম দিকে শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম চলমান থাকলেও বর্তমানে সমিতি থেকে কর্মকর্তাদের কাজে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কর্মবিরতির ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সেবা প্রার্থী সাধারণ শিক্ষার্থীদের। নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা চলমান থাকা অবস্থায় বারংবার প্রশাসন ভবনে গিয়ে নির্দিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা।
জানা যায়, চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি, পোষ্যকোটায় সন্তানদের ভর্তি শর্ত শিথিলসহ (আবেদনের যোগ্যতা থাকলেই ভর্তি) একাধিক দাবিতে কর্মবিরতি শুরু হয় গত ২৬ জুলাই থেকে। উক্ত দাবিতে কয়েকদিন কর্মবিরতি পালন করার পর ২৮ আগস্ট উপাচার্যের কাছে পোষ্য কোটার শর্ত শিথিল এবং চাকরির সময়সীমা বৃদ্ধিসহ ১৬ দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা। পরে ২ সেপ্টেম্বর থেকে এ দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করে আসছেন তারা।
সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন ঘুরে দেখা যায়, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার একাধিক কক্ষে ফ্যান ও লাইট চালু থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। একাডেমিক ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার বেশীরভাগ কক্ষেও একের অধিক কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও সেখানে উপস্থিত এক-দুইজন কর্মকর্তাদের মধ্যেও ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা গেছে।
একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রশাসন ভবনের কর্মকর্তাদের দ্বারস্ত হলে কাজ না করতে চাওয়া কিংবা পরে আসতে বলা হচ্ছে। ফলে সনদ ও বিভিন্ন কাগজপত্র উত্তোলনসহ বিভিন্ন জরুরি কাজ করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে।
এদিকে আন্দোলনের প্রক্রিয়া নিয়ে কর্মকর্তাদের নিজেদের মধ্যেই বিভক্তি লক্ষ্য করা গেছে। দাবিতে একমত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনের পক্ষে নন কর্মকর্তাদের একটি অংশ।
এ বিষয়ে এস্টেট শাখার প্রধান ও কর্মকর্তা সমিতির সাবেক নেতা সামসুল ইসলাম জোহা বলেন, আমরাও এই দাবিগুলোর পক্ষে তবে তা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থবির করে নয়। প্রশাসনের সাথে আলোচনার মাধ্যমে দাবি গুলো পেশ করা উচিত।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কর্মকর্তাদের দাবির সঙ্গে আমরা একমত, তবে আন্দোলনের প্রকৃতির সাথে একমত নই। দেশের ক্রান্তিলগ্নে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় কর্মকর্তাদের এমন কোনো কাজে বঙ্গবন্ধু পরিষদ সমর্থন করবে না।
ইবি শাখা ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিরুল কবির বলেন, কর্মকর্তা কর্মচারীদের দাবি আদায়ের নামে কর্মবিরতি এটা শিক্ষার্থীদের জন্য হয়রানি। তাদের বেশ কিছু দাবি আমাদের কাছে অযৌক্তিক বলে মনে হচ্ছে।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, কর্মকর্তাদের দাবি যদি যৌক্তিক হয় অবশ্যই প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে দাবি আদায় করবে। কিন্তু তা শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে, প্রশাসনিক কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে নয়।
এবিষয়ে কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি এটিএম এমদাদুল আলম বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে। প্রশাসনকে আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা বুঝতে হবে। কর্মকর্তাদের একাংশের যদি আন্দোলন প্রক্রিয়া নিয়ে সমস্যা থাকে তবে তারা সেটা ব্রিফিং করে বলুক।
আন্দোলনের দোহাই দিয়ে দপ্তরসমূহে কর্মকর্তাদের না থাকা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এমদাদুল আলম বলেন, তারা কোনো দিন থাকেনি আজকেও নেই। সেটা কর্মবিরতির জন্য না। তবে একাডেমিক শাখায় এসে কোনো শিক্ষার্থীকে ফিরে যেতে হয়নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, তাদের ন্যায্য দাবি গুলোতো আমরা মেনে নিবো। কিন্তু মাসের পর মাস প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ করে রাখা অনৈতিক। আশা করি বিষয়গুলো নিয়ে তাদের সুবুদ্ধির উদয় হবে। যদি আগামী নির্বাচনকে পুঁজি করে কেউ আন্দোলন করে থাকে তবে তা ঠিক হবেনা। কোনো সময়কেই সুযোগ হিসেবে নেওয়া ঠিক নয়।