বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

প্রযুক্তির কল্যাণে দেশের কাছাকাছি ১ কোটি ৪৯ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি

আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:০৬

বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশিরা। কেউ কাজের তাগিদে, কেউ পড়াশোনা করতে, কেউ হজ করতে; কেউবা আবার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছেন প্রবাসে। কিন্তু দিনশেষে আপনজনদের কাছে ফেরার তাগিদ থাকে সবারই। আর প্রবাস জীবন থেকে ক্ষণিকের জন্য আপনজনদের কাছে পাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে এখনকার ইন্সট্যান্ট ম্যাসেজিং অ্যাপগুলো।

রাজশাহীর ছেলে রাকিব ২০১৭ সালে পড়াশোনা করতে যান যুক্তরাজ্যে। সেই থেকে তার প্রবাস জীবন শুরু। বেশ কয়েকদিন ধরেই মায়ের হাতের শর্ষে ইলিশ খেতে মন চাইছিলো তার। বিদেশে ইলিশ মাছ প্রায় বিরল। তবে সেদিন হঠাৎ ইলিশ মাছ পেয়ে চট করে কিনে ফেললো। এবার বিপত্তি রান্না নিয়ে। ভয় হলো…রান্না মায়ের মতো হয় কি না! মনে সংশয় নিয়েই ইমোতে মা’কে ভিডিও কল দিলো রাকিব। দুর্বল নেটওয়ার্ক-এও পরিষ্কার ভিডিও কল করা যায় বলে ইমোই রাকিবের ভরসা। ওপাশ থেকে মা এক এক করে বলে দিচ্ছেন, আর এপাশ থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছে রাকিব। শেষপর্যন্ত রান্না হলো শর্ষে ইলিশ।

এদিকে, স্বামীর সাথে পবিত্র হজ্ব পালনে সৌদি আরব গেছেন পঞ্চাশোর্ধ সালমা। সেখানে পৌঁছানোর পর তিনি বুঝতে পারেন দেশে ঔষধের বাক্স ফেলে এসেছেন। সালমা যে এলাকায় উঠেছেন সেখানে আশপাশে কোনো ফার্মেসিও নেই, এদিকে আবার তার ডাক্তার তাকে নিয়মিত ঔষধ খেতে জোর দিয়ে বলে দিয়েছেন। এমনকি তার হোটেলের ফোনের নেটওয়ার্কও খুব দুর্বল, ছেলেকে যে ফোন দিবেন সে উপায়ও নেই। ওই মুহূর্তে তিনি ইমোতে কল দিয়ে ছেলেকে জরুরি ঔষধগুলো কারও হাতে সৌদি আরব পাঠিয়ে দিতে বলেন। শেষপর্যন্ত সুস্থ-সবলভাবে হজ্ব পালন করেছেন সালমা।  

প্রতিদিন এমন হাজারো গল্প তৈরী হচ্ছে প্রবাসীদের। এমনকি যারা খুব কম সময়ের জন্য দেশের বাইরে যান তাদের মধ্যেও এক ধরনের অজানা আতঙ্ক কাজ করে। যেন তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু পেছনে ফেলে যাচ্ছেন; অথবা আর কখনও প্রিয়জনের মুখ দেখতে পাবেন কি না, বা তাদের সাথে যদি আর যোগাযোগ করা না যায়, এমন হাজারো অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটান তারা। রাকিব বা সালমার মতো সবারই আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজন দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা। কেননা যোগাযোগই হচ্ছে সেই সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকার একমাত্র মূলমন্ত্র। এই চাওয়াকে পূর্ণতা দিতেই নতুন নতুন প্রযুক্তি আনছে ইমো, টেলিগ্রাম বা ভাইবারের মতো অ্যাপগুলো।

এ বছর বাজেট বক্তৃতার সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, বিশ্বের ১৭৬টি দেশে ১ কোটি ৪৯ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি রয়েছেন। পরিবারের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতেই এতোগুলো মানুষ দেশের বাইরে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। আবার দেশের উন্নয়নেও অবদান রাখছেন তারা। 

২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে প্রবাসী ভাই-বোনেরা মোট ২৩৫ বিলিয়ন (২৩ হাজার ৫০০ কোটি) মার্কিন ডলার রেমিটেন্স হিসেবে দেশে পাঠিয়েছেন। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত এই রেমিটেন্সের টাকাতেই অনেক পরিবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। আর তাদের পাশে দাঁড়াতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। ইমো কাজ করছে, কম ডাটাতেও যাতে অডিও-ভিডিও কল করা যায় তার ওপর। যে কারণে এখন সর্বাধিক সংখ্যক প্রবাসী ইমো ব্যবহার করছে। কিন্তু বসে নেই অন্য অ্যাপগুলোও। প্রবাসীদের জীবনকে সহজ করতে প্রতিদিন তারা আনছে নতুন নতুন প্রযুক্তি।

ইত্তেফাক/এএইচপি