বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত

টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা বিপর্যস্ত জনজীবন

আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:৩৫

গত কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নিম্নাঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। পানির নিচে তলিয়ে গেছে ফসলের খেত। নিম্ন আয়ের লোকজন কাজে যেতে না পারায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর।

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম): প্রায় এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে পাহাড়ি ঢলে ধরলা, বারোমাসিয়া ও নীলকমলসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি বাড়লেও বিপত্সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ দিকে নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল রবিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলের কিছু আমনখেতসহ সবজিখেতের ক্ষতির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। বৃষ্টিপাত আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকলে ধরলাসহ বিভিন্ন নদনদী তীরবর্তী মানুষ জনকে পানিবন্দি জীবন কাটাতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলো ঘুরে জানা গেছে।

কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ফুলবাড়ী উপজেলা জুড়ে ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুই তিন দিন আরও ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিব্বির আহমেদ বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে কখনো ভারী আবার কখনো মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আমরা খোঁজখবর রাখছি। তবে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার নিজ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই আপাতত বন্যার আশঙ্কা নেই। তার পরও উপজেলা প্রশাসন যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আছে। ’

সৈয়দপুর (নীলফামারী): টানা বৃষ্টিতে সৈয়দপুর শহর ও উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলের খেত। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। চলাচলের রাস্তাগুলো সব পানির নিচে। উঠানের রান্নাঘরের চুলা ডুবে কাদায় পরিণত হয়েছে। শাহজাদী (৭৪) নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘তিন দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছি। চারদিকে পানি থাকায় না পারছি ছোট বাচ্চাদের রেখে কাজে যেতে, না পারছি কারো কাছে হাত পাততে। কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছি।’ কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, ‘আমরা সব সময় খবর রাখছি। প্রয়োজনে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।’ সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, সৈয়দপুরে ২৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়): দেবীগঞ্জে টানা বৃষ্টিতে লোকজন ঘর থেকে বের হতে পারছে না। ফলে খেটে খাওয়া মানুষদের দুর্ভোগ বেড়েছে। অনেক নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বহু মানুষের পুকুরের মাছ বের হয়ে গেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল মোমেন জানান, অবস্থার অবনতি হলে সরকারের জিয়ার প্রকল্পের চাল খাদ্য সহায়তা হিসেবে দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।

গঙ্গাচড়া (রংপুর): টানা বৃষ্টিতে গঙ্গাচড়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে আমনখেত। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বন্দি হয়েছে অনেক পরিবার। কোথাও কোথাও ভাঙন দেখা দিয়েছে। নিম্ন আয়ের লোকজন কাজে যেতে না পারায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে । শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান জানান, গতকাল রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুরে ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরও ২ দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানায়।

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন