রোববার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

প্রচার-প্রচারণার অভাব 

দর্শনার্থী বাড়ছে না বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরে

আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:৩৬

দেশের সংরক্ষিত পুরাকীর্তির একটি বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর ভবন। কিন্তু প্রচার-প্রচারণার অভাবে উদ্বোধনের কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও জাদুঘরে বাড়েনি দর্শনার্থীদের সংখ্যা। এর ফলে একপ্রকার ঝিমিয়ে পড়েছে জাদুঘরের কার্যক্রম। তাছাড়া বরিশালের অধিকাংশ মানুষই জানে না এই জাদুঘর সম্পর্কে।

সচেতন মহল বলছে, সঠিক প্রচারণা এবং অব্যবস্থাপনার কারণেই এই বিভাগীয় জাদুঘরটি পরিচিত হতে পারেনি বরিশালবাসীর কাছে। আর কর্তৃপক্ষ বলছে, বিভিন্ন দিবসকে ঘিরে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে নগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশ কয়েকবার চিঠি দিলেও তেমন কোনো সাড়া পাননি তারা।

জানা গেছে, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগে কার্যালয় নেই। খুলনার বিভাগীয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীন এই জাদুঘর। ফলে এর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ হয় না। যার কারণে জাদুঘরটি অবহেলিত রয়েছে। এমনকি বছর জুড়ে জাদুঘরের চারপাশ রাজনৈতিক ব্যানার-ফেস্টুনে ঢাকা থাকে। ফলে বোঝার কোনো উপায় নেই যে সেখানে রয়েছে বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর!  

ইতিহাস সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ফজলুল হক এভিনিউর বরিশাল পুরাতন কালেক্টরেট ভবনটি (বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর) ঔপনিবেশিক শাসনামলের প্রথম প্রশাসনিক ভবন বলে মনে করা হয়। দ্বিতল এই ভবনটি পাশ্চাত্য ও স্থানীয় ইন্দো-মুসলিম স্থাপত্য রীতির সংমিশ্রণে নির্মাণ করা হয়। ভবনের নিচতলায় ১৪টি কক্ষ এবং দোতলায় ৯টি কক্ষ রয়েছে। ভবনটি ২০০৩ সালে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা এবং ২০০৫ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর ২০১৫ সালে শুরু হয় জাদুঘরে রূপান্তরের কাজ। একই বছর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি এই জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন। এরপর থেকেই টিকিটের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা জাদুঘরে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন।  তবে প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ জন দর্শনার্থী আসছেন সেখানে।

জাদুঘরের কক্ষগুলো ঘুরে দেখা গেছে, একটিতে রয়েছে ধান রাখার মাটির মটকা। এছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত এবং ঢাকা থেকে আনা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এর সঙ্গে রয়েছে জাদুঘর ভবনের কিছু উল্লেখযোগ্য জিনিসপত্র। দোতালায় সাজানো ৯টি গ্যালারিতে গ্রামোফোন রেকর্ডার (কলের গান), আসবাবপত্র, শিবলিঙ্গ, মারীচি মূর্তি, কৃষ্ণ মূর্তি, হরগৌরী মূর্তি, মহাদেব মূর্তি, মুসলিম যুগের শিলালিপি, গুপ্ত যুগের পোড়ামাটির নিদর্শন, প্রস্তর নির্মিত পাল যুগের বুদ্ধমূর্তি, পদ্মখচিত সুলতানি যুগের পোড়ামাটির ফলকচিত্র, ব্রোঞ্জের বদনা, পাথরের মালা, মাটির সামগ্রী, তৈজসপত্রসহ অনেক মূল্যবান, দুষ্প্রাপ্য ও আকর্ষণীয় নিদর্শন প্রদর্শন করা হয়েছে।

গুঠিয়া থেকে বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর ঘুরতে আসা ব্যবসায়ী শফিকুর রহমান বলেন, ‘বরিশালে জাদুঘর আছে আগে জানতাম না। পরে  শুনে দেখতে আসলাম। জাদুঘরে এসে ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। এখানে এসে অনেক ভালো লেগেছে।’ 

কলেজ শিক্ষার্থী মো. জিসান বলেন, ‘বিভাগীয় জাদুঘরে প্রত্নবস্তুর অভাব রয়েছে। এর থেকেও বড় অভাব হচ্ছে এর প্রচার-প্রচারণা নেই। সঠিকভাবে প্রচারণা বাড়ালে হয়তো ভবিষ্যতে এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।’

বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরের সহকারী কাস্টডিয়ান আরিফ উর রহমান বলেন, জাদুঘরে দর্শনার্থী বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা ও ৪২ উপজেলায় যাদের কাছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে তা খুঁজে বের করা হবে। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিছু ডিজিটাল প্রোগ্রামও চালু করা হবে। এছাড়া নগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে সভা করে শিক্ষার্থীদের জাদুঘরমুখী করার পরিকল্পনাও আমাদের চলমান রয়েছে। জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু কর্নার করার প্রস্তাব আমরা দিয়েছি, খুব শিগগিরই এর সংযোজন হবে।

ইত্তেফাক/এমএএম