‘বিয়ে না করলে চাকরি থাকবে না’ নোটিস দেওয়া সেই শিক্ষক অবশেষে বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন। তিনি টাঙ্গাইলের গোপালপুর ধোপাকান্দি ইউনিয়নের সাজনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রনিপ্রতাপ পাল। শুক্রবার (২২ সেপ্টম্বর) পারিবারিকভাবে বিয়ের আশীর্বাদ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বর ও কনে পক্ষের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, রনি প্রতাপ পাল গোপালপুর পৌরসভার পালপাড়া মহল্লার রতন পালের দ্বিতীয় ছেলে। লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর এনটিআরসির সুপারিশে ২০১৬ সালে সাজনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে হিন্দুধর্মবিষয়ক শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সম্প্রতি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতিসহ দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ ওঠে। তদন্ত কমিটির সামনে সাক্ষ্য দেন রনি প্রতাপসহ স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক। এতে প্রধান শিক্ষক রেগে যান।
গত ২৬ জুলাই ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে রনিকে বিয়ে নোটিস দেন প্রধান শিক্ষক। অন্যথায় চাকরিচ্যুতির কথা বলা হয়। ধর্মীয় রীতিনীতি ও গোত্র বর্ণের সমস্যায় পাত্রী বাছাইয়ের জন্য আগামী অগ্রহায়ণ পর্যন্ত বিয়ের সময় প্রার্থনা করেন রনি। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বিয়ে সম্পন্ন করার পুনঃনির্দেশ দেন প্রধান শিক্ষক। এমনকি গত ২৩ আগস্ট অফিসে ডেকে নিয়ে সব শিক্ষকের সামনে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এমতাবস্থায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে রনি পরদিন গোপালপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরদিন দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চেয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী স্কুল প্রাঙ্গণে মানব বন্ধন করেন। ইত্তেফাকসহ দেশের প্রভাবশালী বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে এ খবর প্রচারের পর বিষয়টি নজরে আসে শিক্ষা অধিদপ্তরের। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের নিদের্শে টাঙ্গাইল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় দুই দফা তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পান। গত ৩০ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন র্কতৃপক্ষের কাছে জমা দেন।
রনি প্রতাপের অভিযোগ, এতো কিছুর পরেও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেননি। কিন্তু তার প্রতি হুমকি থেকেই যাচ্ছিল। এমতাবস্থায় চাকরি হারানোর ভয়ে রনি প্রতাপ বাধ্য হয়ে দ্রুত বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। পরিবারের পছন্দে কালিহাতী উপজেলার মগড়া গ্রামের সত্য পালের মেয়ে স্বর্ণা পালকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন তিনি। পাত্রী স্বর্ণা একটি সরকারি কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়েন। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ের আশীর্বাদ গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়। আগামী অগ্রহায়ণে বিয়ের বাকি কাজ সম্পন্ন হবে। প্রধান শিক্ষককে বিয়ের দিন আমন্ত্রণ জানানো হবে বলেও ইত্তেফাকের এই সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন রনি পাল।