রোববার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

বঙ্গবন্ধুর প্রতি শিশুর অকৃত্রিম শ্রদ্ধা!

আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:০৫

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা দেখানো সেই ছোট্ট শিশু মরিয়ম সায়মার হাতে ফুল, বই ও একটি গিফট বক্স (উপহার সামগ্রী) তুলে দিয়েছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান। বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ওই শিশু ও তার মা আখি আক্তারকে ডেকে নিয়ে এসব উপহার দেওয়া হয়।

এর আগে মাদারীপুর বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম সায়মা (৮) প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর বাসায় ফেরার পথে জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবনের দেয়াল চিত্রে তার রুমাল দিয়ে কোমল হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্যগুলো পরিষ্কার করে দেয়। পরিষ্কার হলে ছবিগুলোয় চুমু খেয়ে আবার স্যালুট জানায়। আবার ছবিগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষার জন্য দোয়া চায়। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রতিদিন এভাবেই শিশুটি তার মনের মাধুরী দিয়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করে আসছিল।

বিস্ময়কর বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপরই বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আসে। পরে তিনি ওই শিশুকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে ফুল দিয়ে স্বাগতম জানান। পরে শিশুটির হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা বই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’সহ আরও একটি বই তুলে দেন। এসময় জেলা প্রশাসকের মোড়কে একটি গিফট বক্সও (উপহার সামগ্রী) দেওয়া হয় শিশুটিকে।

জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এমন উপহার পেয়ে খুশি শিশু মরিয়ম সায়মা ও তার মা আখি আক্তার। এ সময় আখি আক্তার বলেন, ‘জেলা প্রশাসক স্যারকে ধন্যবাদ। তিনি আমার মেয়েকে অনুপ্রাণিত করেছে। বঙ্গবন্ধুর লেখা বই উপহার দিয়েছে। আমি অনেক খুশি।’

ছবি: ইত্তেফাক

এ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, ‘প্রতিটি শিশুদের মধ্যে আমরা চাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ জাগ্রত হোক। বঙ্গবন্ধু যেন প্রতিটি শিশুদের মধ্যে বাস করে। দেশপ্রেম দিয়ে তারা পৃথিবী জয় করুক। শিশুদের ছোট্ট ছোট্ট ভালো কাজগুলোকে আমরা এভাবেই অনুপ্রেরণা দিতে চাই।’

‘স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে মরিয়ম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি শেখে। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখলেই তাকে স্যালুট করে। তার ছবি অপরিষ্কার থাকলে পরিষ্কার করে। কখনও রুমাল না থাকলে স্কুল ড্রেস দিয়েই পরিষ্কার করতে থাকে। কখনও কখনও আমার ওড়না দিয়েও পরিষ্কার করতে থাকে। প্রথমে বঙ্গবন্ধুর ছবি পরিষ্কার করলেও এখন তার কন্যা শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের ছবিও একইভাবে যত্ন সহকারে পরিষ্কার করে। বিষয়টি প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও মেয়ের এমন শ্রদ্ধাবোধ দেখে এখন ভালো লাগে। তাই ও ওর কাজটা করে, আমি পাশে দাঁড়িয়ে থাকি। তারপর বাসায় যাই’
- আখি আক্তার
শিশু মরিয়ম সায়মার মা

মাদারীপুর শহরের ২ নং শকুনি এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম মাতুব্বরের মেয়ে মরিয়ম সায়মা। সায়মার বাবা সৌদি প্রবাসী হলেও গত তিন বছর ধরে দেশে ফিরে এখন বেকার। তার মা আখি আক্তার গৃহিনী। সায়মার দুই বছরের বড় একজন ভাই আছে। তার নাম সায়মন ইসলাম। আব্দুস সালাম মাতুব্বরের গ্রামের বাড়ি মূলত শরীয়তপুর সদরে। তবে ছেলেমেয়েদের ভালো স্কুলে লেখাপড়ার জন্য মাদারীপুর শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিশুটি বাম হাতে পরীক্ষার হার্ডবোর্ড ও ডান হাতে রুমাল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ময়লা লাগানো ছবিটি পরিষ্কার করছে। পরিষ্কার শেষে বঙ্গবন্ধুকে চুমু দিয়ে তারপর স্যালুট জানাচ্ছে। একইভাবে বঙ্গবন্ধুর আরেকটি ছবি পরিষ্কার করে তার কাছে দোয়া চাইছে। শিশুটিকে শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের কয়েকটি ছবিও পরিষ্কার করতেও দেখা যায়। শিশুটির কাছ থেকে ১০ মিটার দূরে মা আখি আক্তার দাঁড়িয়ে ছিলেন।

আখি আক্তারের কাছে শিশু মরিয়ম সায়মার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে মরিয়ম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি শেখে। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখলেই তাকে স্যালুট করে। তার ছবি অপরিষ্কার থাকলে পরিষ্কার করে। কখনো রুমাল না থাকলে স্কুল ড্রেস দিয়েই পরিষ্কার করতে থাকে। কখনও কখনও আমার ওড়না দিয়েও পরিষ্কার করতে থাকে। প্রথমে বঙ্গবন্ধুর ছবি পরিষ্কার করলেও এখন তার কন্যা শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের ছবিও একই ভাবে যত্ন সহকারে পরিষ্কার করে। বিষয়টি প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও মেয়ের এমন শ্রদ্ধাবোধ দেখে এখন ভালো লাগে। তাই ও ওর কাজটা করে, আমি পাশে দাঁড়িয়ে থাকি। তারপর বাসায় যাই।’

শিশুটিকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলে, ‘আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। তাই তার ছবিতে ময়লা পড়া থাকলে আমার খুব খারাপ লাগে। তাই ময়লা মুছে দেই। তার কাছে পরীক্ষার জন্য দোয়া চাই। তিনিও আমাকে দোয়া করে দেন। ফুটপাতের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবি মেশানো থাকায় ময়লা বেশি হয়, ছবিগুলো আরও একটু উপরে দিলে ময়লা হতো না।’

শিশুটির এমন শ্রদ্ধাবোধ প্রায় দেখতে পান বলে জানালেন ফুটপাতের দোকানি রহমত আলী। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায়ই দেখি স্কুলড্রেস পড়া মেয়েটা বঙ্গবন্ধুর ছবি, শেখ হাসিনার ছবি রুমাল দিয়া পরিষ্কার করে। ছবির সামনে দাঁড়িয়ে একা একা কথা বলে। মেয়েটা মন থেকে, ভালো লাগা থেকে এমনটা করে।’

ইত্তেফাক/এইচএ