সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

দাকোপে দুর্গোৎসব: মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি

আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৩৬

সনাতন ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গা পূজার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। প্রতিমা তৈরিতে কারিগরদের ব্যস্ততায় জানান দিচ্ছে দেবী দূর্গার আগমনী বার্তা। সারা দেশের মতো খুলনার দাকোপে চলতি বছর ৮৪টি পূজা মণ্ডপে শারদীয়া দুর্গা পূজা উদযাপনে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এদিকে দুর্গোৎসব উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবম্বীদের মধ্যে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী ও অস্থায়ী এসব সার্বজনীন পূজা মণ্ডপ তৈরি করে পূজার প্রস্তুতি চলছে। প্রতিমা তৈরিতে ভাস্কারদের কল্পনায় দেবী দুর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে মাটির কাজ। কয়েকটি মণ্ডপে আবার ভাস্কাররা শুরু করেছেন রং, তুলি দিয়ে প্রতিমা সাজসজ্জার কাজ। এতে তাদের নিখুঁত হাতের ছোঁয়ায় কৃত্রিম জীবন পাবেন দেবী দুর্গা, শিব, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুরসহ অন্যান্য প্রতিমা। এছাড়া কোনো কোনো প্রতিমায় আবার পরানো হচ্ছে শাড়ি, হাতের বালাসহ অন্যান্য গয়না। এরপর ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি আর আরতিতে মুখরিত হয়ে উঠবে পূজা মণ্ডপগুলো। পাশাপাশি আলোক সজ্জা, প্যান্ডেল তৈরি, মণ্ডপ ও তার আশপাশে সাজসজ্জার কাজসহ নানা কাজেও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন পূজার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি অন্যরাও পূজার কেনাকাটা করতে শুরু করেছেন।

উপজেলার পানখালী এলাকার রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘মহা চণ্ডীতে উল্লেখ আছে ত্রেতা যুগে ভগবান রাজা রাম চন্দ্র দশানন রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে রত হন। পাপের বিনাশের লক্ষ্যে দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার কাছে শক্তি বৃদ্ধির আশায় শরৎ কালে তার পূজা করেছিলেন এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে দেবী সীতাকে উদ্ধার করেন ও রাবণকে হত্যা করতে সক্ষম হন রাম চন্দ্র। সেই থেকে পৃথিবীতে প্রতি বছর শরৎকালে সনাতন ধর্মাবলম্বরা দূর্গোৎসব পালন করে আসছেন। আগামী ২০ অক্টোবর শুক্রবার দেবী পক্ষের ষষ্ঠি তিথিতে বোধন তলায় মঙ্গল ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে শারদীয়া দুর্গা দেবীর এই উৎসব শুরু হবে।’

আগামী ২৪ অক্টোবর মহাবিজয় দশমীতে দেবী দুর্গা প্রতিমা বির্ষজনে উৎসবের সমাপ্তী ঘটবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শাস্ত্রানুযায়ী চলতি বছর দেবী দুর্গার আগমন হবে ঘোড়ায় চড়ে। আর পালকিতে চড়ে কৈলাসে ফিরে যাবেন এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।

চুনকুড়ি এলাকার ভাস্কার কমলেশ মণ্ডল জানান, চলতি বছর তার তিনজনের টিম মিলে বিভিন্ন এলাকায় ১০টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি করছেন। প্রতিমা তৈরিতে মাটির কাজ প্রায় শেষ এখন রং-তুলি দিয়ে শুরু করেছেন প্রতিমা সাজসজ্জার কাজ। এতে তারা আড়াই লাখ টাকা পাবেন। বিভিন্ন মালামালে ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রতিমা তৈরিতে খরচ বেড়েছে।

ওসি উজ্জল কুমার দত্ত বলেন, ‘দুর্গাপূজা শুরু হতে এখনও কয়েক বেশ দিন বাকি আছে। পূজায় যাতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় তার জন্য প্রশাসনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেছি। যেহেতু প্রতিটা পূজা মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। আমরা নজরদারি বৃদ্ধিসহ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। শান্তিপূর্ণ ভাবে দূর্গোৎসব পালনের লক্ষে উপজেলার পূজা মন্ডপগুলোতে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে প্রতি বছরের মতো চলতি বছরও পুলিশ, ব্যাটিলিয়ান আনসার, সাধারণ আনসারসহ মোবাইল টিমের সদস্যরা মোতায়ন থাকবে।’

উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অসিত বরণ সাহা ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার রায় ও চালনা পৌরসভা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অতিন মণ্ডল সঙ্গে আলাপকালে এই সংবাদদাতাকে জানান, চলতি বছর মোট ৮৪টি পূজা মণ্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে দুটি পূজা ব্যক্তিগতভাবে অনুষ্ঠিত হবে। তবে প্রত্যেক মণ্ডপ কমিটিকে বলেনটিয়ার টিম রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মন্দিরের বাইরে সব ধরনের আলোকসজ্জা, সাজসজ্জা, মেলার আয়োজন, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ আরও অনুষ্ঠান থাকবে। সব অপশক্তি রুখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রেখে সবাই মিলে মিশে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব পালন করবেন।

ইত্তেফাক/এইচএ