আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত উপজেলা গেটের সামনে থেমে থেমে চলে এই সংঘর্ষ। এ ঘটনায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, পুলিশ, আনছার সদস্য, সাংবাদিক ও পথচারীসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে শুক্রবার বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান এমপির পক্ষ উপজেলা পরিষদ গেটের সঙ্গে অডিটোরিয়াম হলে ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকারের পক্ষ রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে ওভার ব্রিজের নিচে আলোচনা সভার আয়োজন করে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে একটি শোভাযাত্রা সভাস্থলে যাচ্ছিল। উপজেলা পরিষদ গেট অতিক্রম করার সময় এমপি পক্ষের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এসময় উভয় পক্ষের সহস্রাধিক নেতাকর্মী লাঠিসোটা ও ইট-পাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। প্রায় দুই ঘণ্টা সময় ধরে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ। এসময় আতঙ্কিত হয়ে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে স্থানীয় পথচারী। মূহূর্তেই বন্ধ হয়ে যায় ওই এলাকায় থাকা সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সংঘর্ষ থামাতে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন সাতজন পুলিশ সদস্য, এক আনছার সদস্য, তিনজন সাংবাদিক ও পথচারীসহ শতাধিক নেতাকর্মী।
জাকির হোসেন সরকারের পক্ষের আহতরা হলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বাবু নিরঞ্জন মহন্ত, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা আক্তার জেসমিন, রুহুল আমিন, রাহাত ইসলাম, শাহিদ হাসান প্রিন্স, কামরুজ্জামান, নুরে আলম সিদ্দিকী, সোহেল রানা, রাজা মিয়া, মমিন মিয়া, নাজমুল, কামরুল হাসান, আমিনুল ইসলাম মিলু, বুলবুল, হুমায়ন, শাহেদ, আমজাদ, স্বাধীন আহম্মেদ, মামুন, মেশকাত, গোলাম মিয়া, রেজাউল করিম মাস্টারসহ অনেকে।
এমপি পক্ষের আহতরা হলেন শরিফ, রাব্বি হাসান, মেহেদী, জিয়ন, শিহাব, রাখিবুল, সৌদিক, ইকবাল, রুবেলসহ অনেকে।
আহতদের মধ্যে কারও মাথা, কারও চোখ ও কারও হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। শুক্রবার রাতে আহত দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান ইউএনও রকিবুল হাসান ও এসিল্যান্ড রুহুল আমিন।
উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে আজকের (শুক্রবার) কর্মসূচির বিষয়ে আমি ইউএনও ও ওসির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা মহাসড়কের ওভার ব্রিজের নিচে সভা করতে বলেছেন। আমরা সে অনুযায়ী মিঠাপুকুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে সমাবেত হওয়ার পর মহাসড়ক ধরে একটি শোভাযাত্রা নিয়ে সভাস্থলে যাচ্ছিলাম। পরিকল্পিতভাবে এমপি গ্রুপের লোকজন শোভাযাত্রার শেষের অংশে অতর্কিত হামলা চালায়। পরবর্তীতে আমাদের সভাস্থলের চেয়ার ভাঙচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে।’
এমপি পক্ষের মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হক মিন্টু মিয়া ও উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আব্দুল্যাহ আবু সাঈদের ভাষ্য, দেশরত্ন শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে উপজেলা চত্বর থেকে একটি আনন্দ র্যালির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার একটি র্যালী নিয়ে আমাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এইচএন আশিকুর রহমান এমপি স্যার ও তার সুযোগ্য সন্তাান জননেতা রাশেক রহমান ভাইকে নিয়ে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেয় ও একপর্যায়ে আমাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে। এই ঘটনায় আমাদের বেশ কিছু নেতাকর্মী আহত হয়।
মিঠাপুকুর থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি।’
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, ‘জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সর্বাত্তোক চেষ্টা করেছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে। এ ঘটনায় ওসি সাহেব অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিলেন। তবে, হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তিনি এখন সুস্থ্য আছেন। সবমিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’