বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

কাঁচা রাস্তায় বাঁশের চালি ফেলে যাতায়াত!

আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৩৫

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের অবহেলিত পাহাড়ি অঞ্চলের চার ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের খুবই বেহাল অবস্থা। এই চার ইউনিয়নের বেশির ভাগ রাস্তাঘাট কাঁচা ও কর্দমাক্ত হওয়ায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে দুই লাখেরও বেশি মানুষের দুর্ভোগের সীমাহীন বলে অভিযোগ এসেছে। পাকা রাস্তার অভাবে যুগ যুগ ধরে এলাকাবাসী সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বলে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) কয়েকটি এলাকা ঘুরে ইত্তেফাকের এই সংবাদদাতা রাস্তাঘাটের করুণ ও বেহাল অবস্থার চিত্র দেখেছেন।

অনুসন্ধানে তিনি জানতে পেরেছেন, অবহেলিত পাহাড়ি এলাকা হচ্ছে মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর, তরফপুর, আজগানা ও বাঁশতৈল ইউনিয়ন। লতিফপুর ইউনিয়ন ১২টি, তরফফুর ইউনিয়নে ১৫টি, আজগানা ইউনিয়নে ১৭টি ও বাঁশতৈল ইউনিয়নে ২০টি রাস্তার খুবই বেহাল অবস্থা। এই চার ইউনিয়ন মূলত পাহাড়ি অঞ্চল এবং জেলা শহর টাঙ্গাইল ও উপজেলা সদর মির্জাপুর থেকে দুর্গম এলাকা হওয়ায় রাস্তাঘাটের উন্নয়নের তেমন ছোয়া পড়েনি বলে ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও এই চার ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের অবস্থা একেবারেই করুণ। এই পথ দিয়ে যাতায়াতকারীরা প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হন।

আজগানা ইউনিয়নের তেলিনা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আনোয়ার হোসেন (৪৫) ও আজগানা গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী ছানোয়ার হোসেন (৪৪) অভিযোগ করেন, আজগানা ইউনিয়ন বড় পাহাড়ি এলাকা। প্রতিটি গ্রামের মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। রাস্তাঘাট পাকা না হওয়ায় ভালো যোগাযোগের অভাবে তারা ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জেলা শহর টাঙ্গাইল ও উপজেলা সদর মির্জাপুরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে তাদের গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার ওপর দিয়ে ৩০-৪০ মাইল ঘুরে যোগাযোগ করতে হয়। এতে করে এক দিকে যেমন সময় অবচয় হচ্ছে তেমনি অর্থের দিক দিয়েও তাদের অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে। তাদের অভিযোগ স্থানীয় নির্বাচন এলে চেয়ারম্যান-মেম্বার প্রার্থী, উপজেলা পরিষদের নির্বাচন এলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন এলে এমপি প্রার্থীরা এলাকার উন্নয়ন ও রাস্তাঘাটের পাকাকরণের জন্য নানা আশ^াস দিয়ে তাদের ভোটে নির্বাচিত হন। ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর তারা এলাকায় তেমন আসেন না এবং রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেন না। এভাবেই কেটে গেছে ৫৩ বছর। কিন্ত তাদের যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়নি। ভাগ্যেরও কোনো পরিবর্তন হয়নি।

বাঁশতৈল ইউনিয়নের অভিরামপুর গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ পারভেজ (৩৫) পেকুয়া গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক মোতালেব হোসেন অভিযোগ করেন, মির্জাপুর উপজেলার মধ্যে বাঁশতৈল ইউনিয়নবাসি সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। এই ইউনিয়নে ছয়-সাতটি গ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী উপজাতির বসবাস রয়েছে। যুগ যুগ ধরে তানা নানা ভাবে অবহেলিত। বিশেষ করে রাস্তাঘাটের খুবই বেহাল ও করুন অবস্থা। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই প্রতিটি রাস্তার ওপর জমে হাঁটু পানি। যান চলাচল তো দূরের কথা, পায়ে হেটে চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পরে। রাস্তার ওপর বাঁশের চাঁলি ফেলে পায়ে হাঁটার চেষ্টা করেন। তাদের অভিযোগ সংসদ সদস্য, উপজেরা পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাস্তাঘাট পাকাকরণের জন্য একের পর এক আশ্বাস দিয়ে যান। তাদের সে প্রতিশ্রুতিগুলো আলোর মুখ দেখছে না। এই নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের শেষ নেই। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে নেতা তাদের এলাকার পাকা করে দেবেন তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে জানিয়েছেন। একই অবস্থা লতিফপুর ইউনিয়ন ও তরফপুর ইউনিয়নের বেশির ভাগ রাস্তাঘাট বলে ওই এলাকার ভুক্তভোগী অন্তত ২০ জন এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।

বাঁশতৈল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেলাল দেওয়ান ও লতিফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হোসেন রনির ভাষ্য, তাদের এরাকার রাস্তাঘাটগুলো বেশির ভাগ কাঁচা ও কর্দমাক্ত হওয়ায় চলাচল কষ্টসাধ্য। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও এমপির সঙ্গে সমন্বয় করে কাঁচা রাস্তা উন্নয়নের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

খান আহমেদ শুভ এমপি বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর হলো উপনির্বাচনে আমি এমপি নির্বাচিত হয়েছি। জনগন আমাকে অনেক আশা নিয়ে তাদের ভোটে এমপি বানিয়েছেন। আমি দিন রাত চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রতিটি এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু-কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সুষম উন্নয়নের জন্য। এরই মধ্যে অনেক রাস্তাঘাট পাকা করে দিয়েছি। যেগুলো কাঁচা রয়েছে এগুলোর তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, অল্প দিনের মধ্যে ওই রাস্তাগুলো পাকা হবে। আগামীতে এমপি নির্বাচিত হলে কোন এরাকার রাস্তাঘাট আর কাঁচা থাকবে না।’

মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফুর বলেন, ‘প্রতিটি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ও কাঁচা রাস্তার তালিকা করে এমপির মাধ্যমে অর্থ বরাদ্ধ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অনেক রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে এবং যে রাস্তাগুলোর কাজ এখনও শুরু হয়নি অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে এগুলোর কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

ইত্তেফাক/এইচএ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন