মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

জার্মানিতে এখন শরণার্থীর সংখ্যা প্রচুর: ওলাফ শলৎজ

আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৪২

শরণার্থী মোকাবেলায় জার্মান রাজ্যগুলোকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। এরই মধ্যে বার্লিন কর্তৃপক্ষ পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি চালু করেছে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) প্রকাশ হওয়া এক সাক্ষাৎকারে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বিষয়টি আলোকপাত করে বলেন, ‘বার্লিন কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অনিয়মিত অভিবাসন আটকাতে চায়। জার্মানিতে অভিবাসন নীতি নিয়ে অসন্তোষ বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি পোল্যান্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভিসা দেয়ার বিনিময়ে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ওঠে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু ওয়ারশ থেকে আসা ব্যাখ্যায় ইইউ সন্তুষ্ট নয়। এরপরই জার্মান ব্রডকাস্ট নেটওয়ার্ক রেডাকসিওন নেটভের্ক ডয়েচল্যান্ডে শলৎজের এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ।’

চ্যান্সেলর বলেন, ‘এই মুহূর্তে জার্মানিতে আসতে চাওয়া শরণার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। ৭০ শতাংশেরও বেশি শরণার্থীর আগে কোনো নিবন্ধন হয়নি। তারা প্রায় সবাই ইইউয়ের অন্যান্য দেশে ছিল।’

তিনি আরো বলেন, ‘নভেম্বরে জার্মান রাজ্যগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা আছে। তখন ফ্লেক্সিবল ক্যাপ নিয়ে আলোচনা করবো। যাতে শরণার্থীদের আশ্রয় সংখ্যার ভিত্তিতে রাজ্যগুলোকে অর্থায়নের প্রস্তাব দেওয়া যায়। তার কথায় বার্লিন ওয়ারশকে নিশ্চিত করতে বলেছে, শরণার্থীদের কাছে সহজে জার্মানি আসার ভিসা যেন বিক্রি করা না হয়।’

জার্মানির ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে বেশ কিছু ও কখনও কখনও প্রকাশ্যেও বিরোধ দেখা গেছে। তারপরেও শলৎজ বলেন, ‘ইইউয়ে অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধ করার বিষয়ে এই সরকার সম্পূর্ণ চুক্তিবদ্ধ।’

তার ভাষ্য, এটি শুধুমাত্র সংহতির মাধ্যমে করা যেতে পারে। জার্মানি সাহায্য করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।

জার্মানি সম্প্রতি প্রতিবেশী পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে সীমান্তে নজরদারির বিষয়ে ঘোষণা করেছে। চলতি বছরে আশ্রয় আবেদন প্রায় ৮০ শতাংশ বেড়েছে। তিনটি দেশই আনুষ্ঠানিকভাবে শেঙ্গেন সাধারণ ভিসা এলাকার অংশ, যেখানে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নজরদারি ছাড়াই সীমান্ত পার হতে পারেন।

এরই মধ্যে ইতালির ছোট্ট একটি দ্বীপ লাম্পেদুসায় হাজার হাজার আশ্রয় প্রার্থীর অভিবাসন ও আশ্রয় সংক্রান্ত একটি সংশোধিত চুক্তি নিয়ে কথা চলছে। এ পরিস্থিতিতে জার্মানি ঘোষণা করেছে ২৭ সদস্যবিশিষ্ট ব্লকজুড়ে অভিবাসী বণ্টনের লক্ষ্যে ইইউব্যাপী অভিবাসন সংক্রান্ত নিয়ম নিয়ে তারা একমত। এই ইস্যুতে আপোষ করতে প্রস্তুত।

শলৎজের ওপর এই চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। কারণ কট্টর ডানপন্থী অভিবাসী বিরোধী অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) পার্টি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এদিকে তার দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি), তার জোটের অংশীদারদের ক্ষেত্রে উল্টোটাই হচ্ছে। ২০২৩ সালে জার্মানিতে প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার শরণার্থীদের আশ্রয়ের আবেদন জমা পড়েছে। তবে তাদের মধ্যে নেই ইউক্রেনীয়রা। জার্মানি ১০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে।

অন্যদিকে, ২০১৫ সালে লক্ষাধিক সিরীয় তাদের গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে এসেছিল। তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নে ‘অভিবাসী সংকটের’ সময় জার্মানিতে ১০ লাখ শরণার্থী এসেছিলেন।

এছাড়া, জার্মান সরকার প্রায় ২০ লাখ শূন্য পদ পূরণের জন্য অভিবাসীদের আনতে চায়। জুনে ‘স্কিলড ওয়ার্ক ইমিগ্রেশন ল’ আইনটি সংস্কারের পক্ষে ভোট দিয়েছেন জার্মান আইন প্রণেতারা।

ইত্তেফাক/এমটি/এইচএ