মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

করোনার আইসিইউ ওয়ার্ড বাঁচাচ্ছে জীবন

যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল

আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০১:৩০

সংকটাপন্ন করোনা রোগীদের জীবন বাঁচাতে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ ও এইচডিইউ চালু করা হয়। করোনা বিদায়ের পর সেই আইসিইউ ওয়ার্ডই এখন মানুষের জীবন বাঁচানোর অন্যতম ওয়ার্ডে পরিণত হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সহায়ক সামগ্রী স্থাপন করা হলেও জনবলসংকটে ধুকছে ওয়ার্ডটি। একইসঙ্গে নতুন ভবনে একটি ফ্লোর তৈরি থাকলেও শুধু লিফটের অভাবে ওয়ার্ডটিকে স্থানান্তর করা যাচ্ছে না।

ছবি: ইত্তেফাক

হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ও খুলনাস্থ স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. মো. আক্তারুজ্জামান জানান, করোনাকালীন সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের অক্সিজেন সাপ্লাই দেওয়ার জন্য মাত্র তিনটি হাইফ্লোনেজাল ক্যানোলা স্থাপনসহ তিন শয্যার আইসিইউ চালু করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন এনজিওর সহযোগিতায় ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০ শয্যার আইসিইউ এবং ১৫ শয্যার এইচডিইউ চালু করা হয়। বর্তমানে পুরোনো হাসপাতাল ভবনেই এটি চালু আছে। হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের প্রস্তাবে ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় করোনায় আক্রান্ত ছাড়াও সাধারণ রোগীরা আইসিইউ সেবা পাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইসিইউতে রোগী ভর্তি ফি বাবদ এক হাজার টাকা ও প্রতিদিন শয্যা ভাড়া বাবদ ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশীদ বলেন, পুরোনো ভবনে রোগীর মহাচাপের মধ্যে আইসিইউ ওয়ার্ডটি চালানো বেশ চ্যালেঞ্জিং। এজন্য এটা সিসিইউ ভবনের চতুর্থ তলায় স্থানান্তরের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু ঐ ভবনে তিনতলা পর্যন্ত লিফট যায়। পিডাব্লিউডি চতুর্থ তলা পর্যন্ত লিফট না দিলে স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া, চিকিৎসক-নার্স ও সহায়ককর্মীর সংকট রয়েছে। গত মে মাসে আইসিইউ ওয়ার্ডের জন্য জনবল চেয়ে প্রকল্প পরিচালকের কাছে ১০ জন চিকিৎসক, ২০ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স দরকার বলে উল্লেখ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ হলে এ ওয়ার্ডে থাকবে ১০টি আইসিইউ শয্যা, পাঁচটি এইচডিইউ এবং ২০টি আইসোলেশন শয্যা, চিকিৎসক ও নার্সদের বসার কক্ষ, অক্সিজেন, নেবুলাইজার এবং ভেন্টিলেটরসহ বিভিন্ন উপকরণ। সম্পূর্ণ ওয়ার্ড শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের জন্য লাগানো হয়েছে ২০টি এসি। হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক আরও জানান, খুব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আইসিইউ ওয়ার্ড আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করতে পারেন। তিনি বলেন, আমাদের যে আইসিইউ আছে সেটা একেবারে জাতীয় মানের। এখানে শুধু হাইফ্লো অক্সিজেন নয়, উন্নতমানের ন্যাজাল ক্যানোলা ও আধুনিক মেশিনসহ জরুরি প্রয়োজনে সব সেবা দেওয়া সম্ভব। জনবল চলে এলে ও নবনির্মিত আইসিইউ ওয়ার্ডটি চালু হলে দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে সেরা আইসিইউ ওয়ার্ডে রূপান্তরিত হবে এটি।

আইসিইউ ওয়ার্ড সংশ্লিষ্টরা জানান, কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস চালানোর জন্য ভেনটিলেটর মেশিন, অটোমেটিক শিরিঞ্জ পাম্প মেশিন, কার্ডিয়াক মনিটর স্থাপন করা হয়েছে। এখানে পালস, প্রেসার, অক্সিজেন সেচুরেশন এবং ইসিজি করা যায়। প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ৮০ লিটার অক্সিজেন সাপ্লাই দেওয়ার জন্য হাইফ্লোনেজাল ক্যানোলা স্থাপন, শ্বাসনালী পরিষ্কার করার সাকার মেশিন, শ্বাসপ্রশ্বাস ঠিক রাখার জন্য বিপেপ এবং সিপেপ, হঠাৎ বন্ধ হওয়া হার্টকে শক দিয়ে সচল করার জন্য ডিফিব্রিলেটর স্থাপন এবং প্রতিটি শয্যার বিপরীতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন, একটি ইয়ার ও একটি ভ্যাকিউম লাইন সংযোগ দেওয়া আছে। ফলে এখন থেকে আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন এমন রোগীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর বাইরের কোনো হাসপাতালে যেতে হবে না। তবে হাসপাতালটিতে এবিজি মেশিনের রিএজেন্ট ঘাটতি রয়েছে।

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, আমাদের আইসিইউতে রোগী আনার পর রোগীর স্বজনদের আর চিন্তা করতে হয় না। সমস্ত দায়িত্ব আমাদের সেবাকর্মীরা নিচ্ছেন। ভেতরে রোগীর যাবতীয় অসুবিধা আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা দেখভাল করছেন।

সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, আইসিইউ সেবা চালুর করায় কম খরচে রোগীরা সঠিক সময়ে সঠিক সেবা পাচ্ছেন। এতে হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতিগ্রস্তের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন অনেকে। অপারেশন পরবর্তী কোনো রোগীর আইসিইউ সেবার প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক সুযোগ পাচ্ছেন সরকারি এই হাসপাতালে।

ইত্তেফাক/এমএএম