বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

একা থাকার সিদ্ধান্ত ছিলো ভুল: হেলাল হাফিজ

আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৪৩

'এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়। এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।' উত্তপ্ত সময়ে এই কবিতা লিখে উদ্দীপনা জোগাতে পেরেছিলেন কবি হেলাল হাফিজ। তখনই এই দুই পঙক্তি লেখার শ্রেষ্ঠ সময় ছিলো। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে লেখা এই কবিতার কবির ৭৬তম জন্মদিন আজ। 

জন্মদিনে কেমন আছেন প্রশ্ন করলে কবি হেলাল হাফিজ ইত্তেফাককে জানান, বেঁচে আছি। মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি। নিজের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি পলিয়ার ওয়াহিদকে বলেন, এখন বুঝতে পারছি, একা থাকা ভুল হয়েছে। এভাবে একাকী জীবন বেছে নেওয়া ছিলো ভুল সিদ্ধান্ত। নিজের সঙ্গে অনেক অন্যায় করেছি। অবিচার করেছি। সেসব নিয়ে এখন কিছুটা খারাপ লাগে। তবে এটাই যে অপর আনন্দ শিল্পী জীবনের।

অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকা অবস্থায় কবির পাশে পলিয়ার ওয়াহিদ

১৯৪৮ সালের এই দিনে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। কবির শৈশব, কৈশোর ও যৌবন কেটেছে নিজ শহরেই। কবির বাবার নাম খোরশেদ আলী তালুকদার। মায়ের নাম কোকিলা বেগম।

‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদ। ছবি: কবির ফেসবুক থেকে

১৯৬৫ সালে হেলাল হাফিজ নেত্রকোনা দত্ত হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন। ওই বছরই কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক ‘পূর্বদেশে’ সাংবাদিকতায় যোগদান করেন।

আর করিমের পাতাকর্মে কবি হেলাল হাফিজ। ছবি: ফেসবুকে থেকে নেওয়া

১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশের সাহিত্য-সম্পাদক। ১৯৭৬ সালের শেষ দিকে তিনি দৈনিক ‘দেশ’ পত্রিকার সাহিত্য-সম্পাদক পদে যোগদান করেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন।

যৌবনে ‘যে জলে আগুন জ্বলে’র স্রষ্টা কবি হেলাল হাফিজ। ছবি: কবির ফেসবুক থেকে

কবিতায় অসামান্য অবদানের স্মারক হিসেবে হেলাল হাফিজকে ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়াও তিনি পেয়েছেন- যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নেত্রকোনা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা।

কবি হেলাল হাফিজের সঙ্গে প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

কবি হেলাল হাফিজের লেখালেখির সূচনা ঘটে ষাটের দশকের উত্তাল সময়ে। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। সাংবাদিকতা করার দরুণ কবি ওই সময়ের উত্তাল পরিবেশের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে পেরেছিলেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'যে জলে আগুন জ্বলে' লেখার ঠিক ২৬ বছর পর ২০১২ সালে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ লিখেন। বহুল প্রতিক্ষীত সেই 'কবিতা একাত্তর'ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।

চিরযৌবনের কবি হেলাল হাফিজ। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

স্বল্পপ্রজ এই কবি বিশের দশকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার কবিতার ভাষা সঠিক সময়ে সঠিক শব্দকে ধারণ করায় সময়ের প্রাসঙ্গিক কবি বলেই পরিচিত৷ তাছাড়া প্রেম ও দ্রোহের কবি হিসেবেও তিনি জনপ্রিয়। কবি হেলাল হাফিজ বর্তমানে অসুস্থ। আজীবন অবিবাহিত থাকা কবিকে বহু কষ্টে সময় কাটাতে হয়। শুভ জন্মদিন কবি। 

ইত্তেফাক/এআই/পিও

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন