বেতন বাড়ানোর দাবিতে রাজধানীর মিরপুর, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কিছু দিন ধরে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর চালিয়ে আসছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। নভেম্বরেই বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা এবং ডিসেম্বর থেকেই বর্ধিত বেতন কার্যকর হবে—বিজিএমইএর এমন ঘোষণার পরও থামছে না ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। মালিক পক্ষ, শ্রমিক, সরকার সবাই বেতনের দাবি নিয়ে একমত। তারপরও কেন এসব সহিংস ঘটনা।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে শ্রমিক নামধারী ৩৬ জনের তালিকা পেয়েছে। তাদের মোবাইল ফোন রেকর্ডসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তারা নিশ্চিত হয়েছে যে, এই ৩৬ জন নেতা বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি পুঁজি করে নানা উসকানি ও ইন্ধন দিয়ে গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকদের আন্দোলনে নামিয়েছেন। নানা উসকানিমূলক কথা বলে শ্রমিকদের খেপিয়ে তুলছেন। তাদেরই উসকানিতে শ্রমিকরা গার্মেন্টস শিল্পে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর চালান এবং পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ করেন। এসব নেতা গার্মেন্টসে চাকরি করেন না, গার্মেন্টস শিল্পের সঙ্গেও জড়িত না। কিন্তু তারা স্বার্থান্বেষী মহলের আশীর্বাদপুষ্ট নেতা। তারা বহিঃবিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক সংগঠনের নামে কোটি কোটি টাকার আর্থিক অনুদান পেয়ে থাকেন। ঐ সব দেশ তাদের মতলব অনুযায়ী গার্মেন্টস শ্রমিকদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। দেশগুলো তাদের নিযুক্ত শ্রমিক নামধারী নেতাদেরকে দিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের উসকানি দিচ্ছে এবং তাদের আন্দোলনে নামিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে অতীতেও যেমন কাজ করেছে, বর্তমানেও করছে।
এসব শ্রমিক নামধারী নেতা বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। তারা শ্রমিকের কাজ করেন না। তারা নামেই শ্রমিক নেতা। তারাই গার্মেন্টস কারখানায় নাশকতায় জড়িত। তারাই বিশৃঙ্খলার উসকানি ও ইন্ধনদাতা। তাদের কাছে বিদেশ থেকে টাকা আসে। তাদের কাছে শ্রমিক ফেডারেশন, এনজিওয়ের নামে টাকা আসছে। একজন আছেন সভাপতি, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের নেতার স্ত্রী। এছাড়া আরও কয়েক জন আছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিদেশ থেকে যে টাকা এসেছে তার প্রমাণ এবং তাদের মোবাইল ফোনের কথোপকথন পর্যবেক্ষণ করে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এসব তথ্য পেয়েছে। তাদের ব্যাপারে আরও গভীরতর তদন্ত চলমান।
বিক্ষোভে নামার পর থেকে পুলিশ, মালিকপক্ষ এমনকি শিল্প মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গেও শ্রমিকদের কোনো কথা বলতে দিচ্ছেন না এসব শ্রমিক নেতা। উলটো গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনকে উসকে দিচ্ছে শ্রমিক নামধারী ঐ চক্রটি। তারাই সুকৌশলে শ্রমিক অসন্তোষ লাগিয়ে দিয়েছে। শ্রমিকদের আন্দোলন থেকে পরিকল্পিতভাবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে টার্গেট করে তাদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটছে। শান্তিপূর্ণ অবস্থানের পরও হামলার শিকার হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। ভাঙচুর চালানো হচ্ছে শ্রমিকদের রুটিরুজির পোশাক কারখানাতেও। হেলমেট পড়া দুর্বৃত্তরা ভাঙচুর চালাচ্ছে যানবাহন ও প্রতিষ্ঠানে। ফলে শ্রমিকদের এই আন্দোলন আসলে কীসের উদ্দেশ্যে আর এর নেপথ্যে ইন্ধনদাতা কারা সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজিএমইএ ও গার্মেন্টস শ্রমিক নেতারাও বলছেন, কোনো একটি পক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে মিশে পরিকল্পিতভাবে সহিসংতা চালাচ্ছে। পুলিশও বলছে, বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনের নামে সহিংসতা সৃষ্টিকারী অনেকের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়া এক পোশাক শ্রমিককে জীবিত উদ্ধার করেছে র্যাব। তবুও মিরপুরে পোশাক শ্রমিকদের তাণ্ডব থামানো যায়নি।