মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ডায়াবেটিসে বাড়ছে অন্য রোগে আক্রান্তের হার

আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ০১:৩৯

বাংলাদেশের শহর ও গ্রামে প্রায় সমানভাবে বাড়ছে ডায়াবেটিক রোগী। গত দুই বছরে ৫৬ শতাংশ  রোগী বেড়েছে। নিয়মিত চিকিত্সা না করায় ইনসুলিন নেওয়ার পরও ৮০ ভাগের বেশি রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই। সর্বশেষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থায়নে যে গবেষণা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে, দেশে মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। অর্থাত্ প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিস রোগে ভুগছে। ডায়াবেটিস থেকে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। এর মধ্যে প্রধান হলো হূদেরাগ। হূদেরাগের ৮০ শতাংশ রোগীই ডায়াবেটিসের কারণে মারা যায়। ৪০-৪৫ শতাংশের কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হয় ডায়াবেটিসের কারণে। এছাড়া অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস রোগীর ২৯ শতাংশ রেটিনোপ্যাথিতে ভুগছেন। ডায়াবেটিসের কারণে প্রজননক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয় বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। দিবসটি উপলক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারিভাবে আলোচনাসভা, বিনা মূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয়, শোভাযাত্রা এবং সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করে ডায়াবেটিস নিয়ে কাজ করা দেশেও বিভিন্ন সংগঠন। ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরে এবং বারডেম, এনএইচএন ও বিআইএইচএসের আওতাধীন বিভিন্ন কেন্দ্রে বিনা মূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয় করা হয়। বারডেম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় রোগী ও বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের মধ্যে আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব। বারডেম মিলনায়তনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠান। সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, বারডেম জেনারেল হাসপাতালের মহাপরিচালক অধ্যাপক এম কে আই কাইয়ুম চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেছেন, ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালেই ডায়াবেটিস রোগী বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। ২০১৯ সালে ছিল ৮৪ লাখ। সেখানে দুই বছরের মাথায় তা গিয়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৩০ লাখে, যা অত্যন্ত ভয়ংকর চিত্র। আরো ভয়ের বিষয় হচ্ছে অনেকেই জানেন না, তাদের ডায়াবেটিস আছে। উপসর্গ না থাকায় ৬০ ভাগ লোকই জটিলতা হওয়ার পরে চিকিত্সা নেন।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, যাদের ডায়াবেটিস নেই, তারা যদি ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সেসব ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে পারেন, তাহলে অনেকটাই প্রতিরোধ সম্ভব। এছাড়াও সঠিক খাদ্যাভাস এবং জীবনমানের পরিবর্তন করে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও ঝুঁকি এড়ানো যায়। ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তিনি জানান, পরিসংখ্যান বলছে, গ্রামের চেয়ে শহরে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেশি। কিন্তু প্রি-ডায়াবেটিস শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। এর কারণ মানুষের হাঁটাচলা কমে যাওয়া, ডিভাইসের বেশি ব্যবহার ও ফাস্টফুড খাবারের অভ্যাস গড়ে ওঠা, কায়িক পরিশ্রম না করা। তিনি আরো বলেন, ডায়াবেটিসের শুরুতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ থাকে না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে এটি। এজন্য ৪০ বছরের বেশি সবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা জরুরি। যাদের ঝুঁকি বেশি তারা ৩০ বছর হলেই পরীক্ষা করবে। বারডেম একাডেমির পরিচালক ও হাসপাতালের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান বলেন, ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। এ রোগ কখনো সম্পূর্ণ সারে না। সারা বিশ্বেই এই রোগ আছে।

এই উপমহাদেশে প্রকোপ কিছুটা বেশি। ডায়াবেটিসের কিছু ঝুঁকি আছে পরিবর্তন করা যায় এবং কিছু যায় না। কারো পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং বংশে কারো ডায়াবেটিস থাকলে সেক্ষেত্রে অন্যরা কায়িক পরিশ্রম না করলে, ওজন ও মেদ বাড়লে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে থাকেন। এছাড়া হার্টের রোগী, উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, কোলেস্টরেল বেশি, ধূমপান করেন, শরীরে ইনুসলিনের কার্যক্ষমতা কম, তারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। ঝুঁকি কমাতে পারলে রোগটি প্রতিরোধ সম্ভব।

ইত্তেফাক/এসকে